হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমানে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দপ্তরের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম আলী সাঈদি শাহরুদি। তিনি বলেছেন, আমাদের বুঝতে হবে আমরা কোন শত্রুর মুখোমুখি অবস্থান করছি।
সম্প্রতি শাহরুদি এক বক্তৃতায় গোটা বিশ্ব ও পশ্চিম এশিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
তিনি বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, বিশ্বব্যাপী আমরা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্প দেখতে পাচ্ছি। গাজাবাসী ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ভয়ঙ্কর গণহত্যা, লেবানন ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ভয়াবহ আগ্রাসন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ এবং ইউরোপে উগ্র ডানপন্থিদের উত্থান বিশ্ববাসীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে বোঝা যায়, বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্যে মারাত্মক পরিবর্তন আসছে এবং ক্ষমতার পালাবদল ঘটতে যাচ্ছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দপ্তর প্রধান এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে ইরানের দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন, পঞ্চদশ শতাব্দিতে একবার ইউরোপ শিল্প বিপ্লবের জের ধরে বিশ্ব শক্তির কেন্দ্র পরিণত হয় যা শেষ পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝপথে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার না হয়েই আমেরিকা ওই যুদ্ধে যোগ দেয় এবং জয়ী হয়। ফলে শক্তির কেন্দ্র ইউরোপ থেকে আমেরিকায় স্থানান্তরিত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর ২০০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: এখন দেশটি বিশ্ব শক্তির প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম শাহরুদি বলেন, শুধুমাত্র বিংশ শতাব্দির শেষ অর্ধাংশে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ২১টি দেশে সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে। কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ সুস্পষ্টভাবে আমেরিকার অপরাধযজ্ঞের শক্তি প্রমাণ করেছে।
এখন শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তন হতে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বিশ্লেষকের মতে, আমেরিকার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে চীন, রাশিয়া, ভারত ও ইরান বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।
আমরা বর্তমানে শেষ জামানায় অবস্থান করছি এবং বিশ্ব মানবতা তার ত্রাণকর্তার (ইমাম মাহদী আ.ফা.) জন্য অপেক্ষমান বলে তিনি উল্লেখ করেন। শাহরুদি বলেন, আমাদেরকে এ বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে হবে যাতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তেল আবিব ও ওয়াশিংটনের দু’টি পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে, গোটা বিশ্বের ওপর আধিপত্য বিস্তার করা এবং দ্বিতীয় পরিকল্পনা হচ্ছে, হযরত ঈসা মাসিহ বা তাদের ভাষায় যীশু খ্রিস্টের আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করা।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এই দপ্তর প্রধান বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের এই কাজ মুসলমানদের হযরত ইমাম মাহদির আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষার সমতুল্য। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমানের শেষ জামানায় মানব সভ্যতাকে ইমাম মাহদির আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, শেষ জামানায় হযরত ইমাম মাহদির আবির্ভাব হবে এবং তিনি গোটা বিশ্ব পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
আমরা বিশ্বে দুই ধরনের প্রতিশ্রুতিবাদ ও সংস্কারবাদ প্রত্যক্ষ করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সত্যের সম্মুখভাগে রয়েছে ইমাম মাহদির প্রতিশ্রুতি যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মিথ্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। পক্ষান্তরে অপরাধীরা শয়তানের শাসনের কথা বলে। কাজেই, আজকের যুদ্ধ হচ্ছে হক ও বাতিল বা ন্যায় ও অন্যায়ের সংঘাত।
হক ও বাতিলের মধ্যকার যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম শাহরুদি বলেন, প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শত্রুর শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসছে; তবে এর অর্থ এই নয় যে, শত্রু পশ্চাদপসরণ করবে। শত্রুর হাতে যতক্ষণ একটি গুলি অবশিষ্ট থাকবে, যতক্ষণ সে নিঃশ্বাস নিতে পারবে ততক্ষণ সে হোয়াইট হাউজকে রক্ষা করা জন্য, আমেরিকা ও ইসরায়েলের ক্ষমতায় অধিষ্টিতদের রক্ষা করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে জানিয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এই চিফ অব স্টাফ বলেন, আমাদেরকে বুঝতে হবে আমরা কোন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছি। আজ গাজায় যে গণহত্যা চলছে তা কেবল ফিলিস্তিন নয় বরং গোটা বিশ্বের সমস্যা। আমরা বর্তমানে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, ইহুদিবাদীদের প্রথম স্লোগান ছিল নীলনদ থেকে তারা ফোরাত পর্যন্ত তাদের অবৈধ রাষ্ট্রের বিস্তৃতি ঘটাবে এবং এরপর তারা গোটা বিশ্বের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে। কাজেই শুধুমাত্র গাজা উপত্যকা নয় বরং ইহুদিবাদী ইসরাইল গোটা মুসলিম বিশ্ব দখল না করা পর্যন্ত থামবে না।