۲۸ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۹ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 17, 2024
হযরত মুহম্মাদ (সা.)
হযরত মুহম্মাদ (সা.)

হাওজা / মহানবী (সা.)-এর একমাত্র কন্যাসন্তান হযরত ফাতিমা (আ.) পিতার শয্যার পাশে বসেছিলেন এবং তাঁর উজ্জ্বল মুখমণ্ডলের দিকে তাকাচ্ছিলেন।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ১- অস্থিরতা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সমগ্র মদীনা নগরীকে গ্রাস করেছিল। মহানবী (সা.)-এর সাহাবীগণ অশ্রুসজল নয়নে এবং দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে মহানবীর অসুস্থতার পরিণতি সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর ঘরের চারপাশে সমবেত হয়েছিলেন। ঘরের ভেতর থেকে বাইরে আসা খবর মহানবীর স্বাস্থ্যের অবনতি ও সংকটজনক অবস্থার কথাই ব্যক্ত করছিল এবং তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি ও আরোগ্য সংক্রান্ত সব ধরনের আশা মিটিয়ে দিচ্ছিল এবং নিশ্চিত করছিল, মহানবীর জীবন প্রদীপের সর্বশেষ শিখা নির্বাপিত হবার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা অবশিষ্ট আছে।

মহানবী (সা.)-এর একদল সাহাবী নিকট থেকে তাঁদের মহান নেতাকে দেখা ও তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে যে কক্ষের মধ্যে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন, সেখানে তাঁর আহলে বাইত ব্যতীত আর কারো পক্ষে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না।

মহানবী (সা.)-এর একমাত্র কন্যাসন্তান হযরত ফাতিমা (আ.) পিতার শয্যার পাশে বসেছিলেন এবং তাঁর উজ্জ্বল মুখমণ্ডলের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তিনি যখন পিতার কপাল ও মুখমণ্ডলের উপর মুক্তার দানার মতো মৃত্যু-ঘামের বারিবিন্দুসমূহ ঝরে পড়তে দেখলেন, তখন তিনি ভগ্ন হৃদয়ে, অশ্রুসিক্ত নয়নে এবং রুদ্ধকণ্ঠে মহানবী (সা.)-এর শানে হযরত আবু তালিব রচিত এ কবিতাংশ মৃদু স্বরে আবৃত্তি করছিলেন :

“ঐ উজ্জ্বল মুখমণ্ডল, যাঁর মর্যাদার উসীলায় মেঘমালার বারিবিন্দুর জন্য প্রার্থনা করা হয়; তিনি অনাথদের আশ্রয়স্থল এবং বিধবা নারীদের রক্ষক।”

এ সময় মহানবী (সা.) চোখ মেলে তাকালেন এবং নিচু স্বরে কন্যার উদ্দেশে বললেন :

“এ কবিতা আবু তালিব আমার শানে আবৃত্তি করেছেন। তবে এর স্থলে পবিত্র কুরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত উত্তম :

و ما محمّد إلّا رسول قد خلت من قبله الرسل أفأن مات أو قُتل انقلبتم علي أعقابكم و من ينقلب علي عقبيه فلن يضرّ الله شيئا و سيجزى الله الشاكرين

-মুহাম্মদ শুধু আল্লাহর রাসূল, তাঁর আগে রাসূলগণ প্রস্থান করেছেন। অতএব, যদি তিনি ইন্তেকাল করেন বা নিহত (শহীদ) হন, তা হলে কি তোমরা তোমাদের পেছন দিকে (পূর্বপুরুষদের ধর্মের দিকে) প্রত্যাবর্তন করবে? আর যারা তাদের দিকে ফিরে যাবে, তারা কখনোই মহান আল্লাহর ন্যূনতম ক্ষতিও করতে পারবে না। আর তিনি কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন।” (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)

হযরত ফাতিমা (আ.)-এর সাথে মহানবী (সা.)-এর কথোপকথন

অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, নিজ সন্তানদের প্রতি বড় বড় মনীষী ও ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বদের আবেগ-অনুভূতি অধিক চিন্তা-ভাবনা ও কর্মব্যস্ততার দরুন নিস্প্রভ হয়ে পড়ে। কারণ মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং সর্বজনীন চিন্তা- ভাবনা তাঁদেরকে এতটা আত্মমগ্ন করে রাখে যে, এর ফলে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ-অনুভূতি তাঁদের মাঝে বিকশিত হতে পারে না। তবে মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গ এ নিয়মের ব্যতিক্রম। সবচেয়ে মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং বিশ্বজনীন ধ্যান-ধারণা ও আদর্শের অধিকারী হওয়া সত্বেও তাঁরা প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী এবং তাঁদের অন্তরাত্মা মহান। আর এ কারণেই জীবনের একটি দিকে ব্যস্ত হওয়া কখনো তাঁদেরকে জীবনের অপর দিক থেকে নির্লিপ্ত করে না।

একমাত্র কন্যাসন্তানের প্রতি মহানবী (সা.)-এর প্রগাঢ় টান ও ভালোবাসা প্রকৃতপক্ষে মানবীয় আবেগ-অনুভূতির সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ। তাই মহানবী কন্যার কাছ থেকে বিদায় না নিয়ে কখনোই সফরে বের হতেন না এবং সফর থেকে ফিরে এসে সর্বাগ্রে তিনি তাঁর সাথে দেখা করার জন্য ছুটে যেতেন। নিজের স্ত্রীগণের সামনে তাঁকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতেন এবং সাহাবীগণকে বলতেন : “ফাতেমা আমার দেহের টুকরা। যা তাকে সন্তুষ্ট করে, তা আমাকেও সন্তুষ্ট করে; আর তার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি আমারই ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি।”

হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-এর সাক্ষাৎ মহানবী (সা.)-কে বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্রা ও মমতাময়ী নারী হযরত খাদীজার কথা স্মরণ করিয়ে দিত, যিনি তাঁর স্বামীর পবিত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথে বিস্ময়কর সব দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নিয়েছিলেন এবং এ পথে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি ব্যয় করেছিলেন।

যে কয়েকটি দিন মহানবী (সা.) শয্যাশায়ী ছিলেন, সে ক’টি দিন হযরত ফাতিমা (আ.) পিতার শয্যা পাশে বসে থাকতেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও পিতার কাছে থেকে দূরে সরেন নি। হঠাৎ মহানবী (সা.) ইঙ্গিতে বোঝালেন, তিনি তাঁর সাথে কথা বলবেন। নবীকন্যা একটু ঋজু হয়ে মহানবীর কাছে মাথা নিয়ে গেলেন। তখন মহানবী (সা.) তাঁর সাথে আস্তে আস্তে কথা বললেন। যাঁরা তাঁর শয্যাপাশে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের কেউ মহানবী ও তাঁর কন্যার কথোপকথনের বিষয় সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবগত হতে পারেন নি। মহানবী কথা বলা শেষ করলে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) কাঁদলেন এবং তাঁর দু’চোখ বেয়ে বন্যার স্রোতের মতো অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। এ অবস্থায় মহানবী (সা.) তাঁকে আবার ইশারা করে কাছে ডেকে তাঁর সাথে আস্তে আস্তে কথা বললেন। এবার হযরত যাহরা (আ.) হাসিমুখে মাথা উঠালেন। একই সময় পরস্পর বিপরীত এ দুই আচরণ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে বিস্মিত করেছিল। তাঁরা নবীকন্যার কাছে অনুরোধ করলেন যেন তিনি তাঁর সাথে মহানবীর যে কথা হয়েছে, তা তাঁদের জানান এবং এ দুই অবস্থার উদ্ভবের কারণও তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু যাহরা (আ.) বললেন : “আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর রহস্য ফাঁস করব না।”

মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর হযরত যাহরা (আ.) হযরত আয়েশার পীড়াপীড়িতে তাঁদেরকে ঘটনার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেন এবং বলেন : “আমার পিতা প্রথমে তাঁর ইন্তেকালের কথা জানিয়ে বলেন : আমি এ অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করব না। এ কারণেই আমার তখন কান্না পেয়েছিল। তবে পরে তিনি আমাকে বললেন : আমার আহলে বাইতের মধ্য থেকে তুমিই প্রথম, যে আমার সাথে মিলিত হবে। এ সংবাদ আমাকে আনন্দিত করল এবং আমিও বুঝতে পারলাম, অল্প কিছুদিন পরেই আমি পিতার সাথে মিলিত হব।”…চলবে…

تبصرہ ارسال

You are replying to: .