۲۸ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۹ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 17, 2024
ইরানে বিশাল হিজাব বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম
ইরানে বিশাল হিজাব বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম

হাওজা / সত্যি ঘটনা হল পাশ্চাত্য যেমনিভাবে সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারী বলে প্রচার চালিয়েছিল তেমনি আজ ইরানের দাঙ্গাবাজদেরও "শান্তিপুর্ণ আন্দোলনকারী" বলে চালাচ্ছে।

ড: মঞ্জুর আলম টিপু

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, মানুষের অজ্ঞতা ও পাশ্চাত্যের প্রোপাগান্ডার কারনে ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনায় কতগুলো ভুল ধারনার সৃষ্টি হয়েছে। আসুন আমরা আপাতত ২টি বিভ্রান্তির ফানুস ফুটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করিঃ

১ নম্বর ফানুস-- ইরানের স্বাধীনচেতা জনগন বাধ্যতামুলক হিজাব চায়না বলেই স্বাধীনতার দাবীতে আন্দোলন করছেঃ "মানুষকে আল্লাহ স্বাধীনতার ফিতরাত দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ কী খাবার খাবে, কী পোষাক পরবে, কোন ধর্মে বিশ্বাস করবে নাকি অবিশ্বাস করবে এগুলো মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আল্লাহ পরকালে এগুলোর বিচার করবেন। এতে ইহজাগতিক রাষ্ট্রের নাক গলানোর কোন অধিকার নেই।

ফ্রান্স ও ভারতে যখন হিজাব বিরোধী আইন পাশ হয় তখন দুনিয়ার তাবৎ শাহবাগীরা (মনে মনে হলেও) মুসলিম ধর্মবিশ্বাসীদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে হিজাববিরোধী আইনের প্রতিবাদ করেছে রাস্ট্রের অনধিকার হস্তক্ষেপের। এখন যেহেতু ইরানের শাহবাগী (মুক্তমনা ?) জনগন হিজাব বাধ্যতামূলক করা তথা ব্যক্তি-স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রের নাহক হস্তক্ষেপ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, সকল হকপন্থী মানুষের উচিত এ আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়ানো।"

১ নম্বর আলপিন--- শ্লীল এবং অশ্লীল পোষাকের বিধান কস্মিনকালেও রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপমুক্ত ছিলোনা এবং কোথাও নেইঃ শাহবাগীদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসের সবচে বড় প্রমান পাওয়া কোরবাণি ঈদের সময়। তারা তখন চায় সরকার মুসলমানদের পশু জবাইকে আইন করে নিষিদ্ধ করুক। অনেকে চায় অন্ততপক্ষে শিশুদের সামনে পশু জবাই যেন না করা হয়। সাধারন সময় দূরে থাক, সামান্য ক্রিকেট খেলার মওসুমে কেউ পাকিস্তানের পতাকা ঊড়ালে তাদের 'চেতনা' এমন আঘাত লাগে যে বাংলাদেশে পাকিস্তানের পতাকা উড়ানো নিষিদ্ধ করার আইনতো তারা চায়ই, আর আইন না থাকলেও তারা লগি বৈঠা নিয়ে চামড়া ছিলে ফেলার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠে।

পশু কোরবানী আর পতাকা প্রসংগ ছেড়ে এখন আসুন পোষাক প্রসঙ্গে। আমেরিকা, কানাডা সহ পাশ্চাত্যের বেশিরভাগ দেশেই (বিশেষ কিছু বীচ ও সীমিত কিছু এলাকা ছাড়া) কোন নারী শরীরের ঊর্ধ্বাংশ অনাবৃত করে চললে পুলিশ তাকে জরিমানা করবে। কোন দেশ ঊর্ধাংশ অনাবৃত করতে দিলেও নিম্নাংশ অনাবৃত করা বেআইনি করে রেখেছে। যদি একদল শাহবাগী নারী শরীরের ঊর্ধ্বাংশ উদোম করে instagram এ ছবি পোস্ট করে তাহলে কি তাদের ছবি কি delete করে দেয়া হবেনা? Instagram কর্তৃপক্ষের হেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কি আমাদের শাহবাগীরা বিরিয়ানী সহ আন্দোলন শুরু করবে?

শ্লীলতা এবং অশ্লীলতার সীমারেখা কখনোই পুরোপুরি ব্যক্তিগত ব্যাপার ছিলোনা এবং হতে পারেনা। যে সমস্ত রাষ্ট্র সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে চলা বেআইনি করেনি তাদের কেউই জনসমক্ষে পশুবলি, প্রাকৃতিক কর্ম এবং যৌনকর্ম করা বেআইনি করে রেখেছে। এ বিষয়ক কোন কোন রাষ্ট্রের কোন কোন সময়ের আইন হয়ত শাহবাগীদের কারো কারো পছন্দ বা অপছন্দ হতে পারে কিন্তু পোষাকের সীমারেখা নিয়ে রাষ্ট্র কখনোই কিছুই বলতে পারবেনা, এটা চরম গোঁড়া শাহবাগীও দাবী করতে পারবেনা।

২ নম্বর ফানুস-- ইরানের মানুষ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার অবসান চায়ঃ

১৯৭৯ সালের আগে শাহের শাসনব্যবস্থায় যেমন মানুষ অসন্তুষ্ট ছিল এখনকার মোল্লাদের শাসনেও মানুষ অতিষ্ঠ। আগে যেমন দুর্নীতি ছিল এখনো মোল্লারা তাদের চেয়ে কম দুর্নীতি করছেনা। কিছু মোল্লা শাসন ক্ষমতা পেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে আর সিংহভাগ জনগন অর্থনৈতিক কষ্টে ধুঁকছে।

মোল্লাতন্ত্রের অধীনে ইরান একটা পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মানুষের মিটিং মিছিল করার স্বাধীনতা নাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে বা মিছিলে গেলে পিটিয়ে মারা হয়। এর প্রমাণ হল হিজাব না পরার জন্য মাহসা আমিনী নামের একটি মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করার পর যে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে তাতে এ পর্যন্ত ২২৪ জন নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৬ বছর বয়সী মেয়ে নিকা শাকারানী, সারিনা ইসমাঈলীযাদেহ, এবং ১৭ বছর বয়সী আবুল ফযল আদিনেযাদেহ।

মানূষ একদিকে অর্থকষ্ট, দুর্নীতি এবং অন্যদিকে পুলিশী রাষ্ট্র তথা শ্বাসরুদ্ধকর স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি চায় বলেই মাহসা আমিনীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনে এরকম ব্যাপকভাবে অংশ নিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র তথা মোল্লাতন্ত্রের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে।

২ নম্বর আলপিন-- যারা গত ৪৩ বছর ধরে ইসলামী শাসনব্যবস্থার পতনের স্বপ্ন দেখেছে তারাই পরাজিত হয়ে তাদের কল্পনাকে সত্য বলে প্রচার করছেঃ ১৯৭৮ সালে যখন ইরানের ইসলামী আন্দোলনের খবর পত্রিকায় হেডলাইন হয়ে আসা শুরু করে তখন আমি ক্লাস নাইনের ছাত্র। মনে আছে আমাদের শিক্ষকেরা বলতেন, 'মোল্লাদের নেতৃত্বে এ আন্দোলন সফল হবার প্রশ্নই আসেনা!' বিপ্লব সফল হবার পর মানুষ বলা শুরু করল এটা ২ মাসও টিকবেনা। বামপন্থীরা বলা শুরু করল 'মোল্লারা দেশ চালাতে যখন পারবেনা ক্ষমতা চলে আসবে আমাদের মত শাহবাগী (সেকু-বাম) দের হাতে!" গত ৪৩ বছর ধরে তারা অনবরত অভিযোগ করে আসছেঃ 'ইরানে মানুষ মেরে সাফ করে ফেলা হচ্ছে', 'ইরানের অর্থনীতি ডুবে মরছে', "ইরানে স্বাধীনতা নাই, মানুষ অতিষ্ঠ"......... ইত্যাদি ইত্যাদী।

এদেরকে যতই বলা হয় যে, 'দেখ একটা সরকার যদি তার জনগনের উপর অত্যাচার করে এবং জনগন যদি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে সে সরকার টিকে থাকে কেমন করে? সৌদি সরকারের মত সরকারগুলো চাকুরী, ব্যবসার সুযোগ ইত্যাদির বিনিময়ে জনগনের আনুগত্য কিনে নেবার পরও আমেরিকা সহ পাশ্চাত্যের পুর্ন সহযোগিতা ছাড়া যেখানে দুই দিনও টিকার সাহস করেনা সেখানে একদিকে আমেরিকা, ইস্রাইল, ইউরোপ এবং আরব দেশগুলোর বিরোধিতার পর মোল্লা শাসন টিকে থাকে কীভাবে? আর যদি সত্যই সারা দুনিয়ার পরাশক্তিকে কাঁচকলা দেখিয়ে জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাবার কোন ফর্মুলা ইরান আবিষ্কার করে থাকে তাহলে এক্ষুনি হাসিনা, আরবের যাবতীয় শেখ সহ দুনিয়ার তাবৎ স্বৈরশাসকরা সেই ফরমুলার জন্য মোল্লাদের পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া উচিত! রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরকম এক তত্ত্ব আবিষ্কার ও ৪৩ বছর ধরে সফল প্রয়োগের জন্য এক হাজারটা নোবেল প্রাইজ দিলেওতো কম হয়ে যাবে।

একটা স্বাধীনতাহীন শ্বাস্রুদ্ধকর পরিস্থিতি মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ, বিশেষ করে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ রুদ্ধ করে। চীন রাশিয়ার কমিউনিজম যা কারনে আমেরিকার পুজিবাদের কাছে মার খেয়ে গেল তার কারণ হল আমেরিকার নিত্য নতুন আবিষ্কার ও সৃষ্টিশীলতার পরিবেশ যা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো দিতে পারেনি।

ইসলামী বিপ্লবের আগে ইরান ছিল আজকের সৌদি আরবের মত পঞ্চম বৃহত্তম অস্ত্রশক্তি। সঊদী আরব যেমন একটা অস্ত্রও নিজেরা না বানিয়েও রাশিয়া এবং ভারতের চেয়ে বেশী দামি এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে তেমনি ইরানের শাহের অস্ত্রভান্ডার ছিল শুধুমাত্র মার্কিন বিশেষজ্ঞদের নিয়ন্ত্রণাধীন। অস্ত্র উদ্ভাবন দূরে থাক আমেরিকার সর্বাধুনিক অস্ত্রগুলো মেরামতের প্রশিক্ষন থেকেও ইরানীদের দূরে রাখা হত যাতে মেরামতের জন্যও ইরান আমেরিকার উপর নির্ভরশীল থাকে। সেই অবস্থা থেকে আজ ইরান কোথায় এগিয়েছে। ২০১৪ সালে (https://www.thejakartapost.com/.../lipi-iran-electronics...) বিশ্বের ৫২টা দেশ ইরানের উন্নত রাডার টেকনোলজির খরিদ্দার।

যে আমেরিকা ইরানের মিসাইল ও ড্রোন নিয়ে হাসাহাসি করে বলত ওগুলো সব অতিরঞ্জিত, ড্রোনের ছবিগুলো ফটোশপ করা, সে আমেরিকা আজকে বলা শুরু করেছে যে ইউক্রেনের নিরীহ মানুষ মেরে ইরান যুদ্ধাপরাধ করছে!

বিপ্লবের আগে ইরানে স্বাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ, আজ সেটা ৯০ শতাংশের উপর। বিপ্লবের আগে কেঊ ইরানী সিনেমার নাম শুনেছিল? বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্কিং এ বাংলাদেশ কোথায়? অথচ ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাঙ্কিং প্রতি বছর সামনের দিকে এগুচ্ছে। বাংলাদেশে গবেষনার অবস্থা দেখলে যেখানে গো সম্প্রদায় লজ্জা পাবে সেখানে পুরো বিশ্বে গবেষনায় উন্নতি অর্জনের রাঙ্কিং এ ইরান শীর্ষে।

আজকে ইন্টারনেট ঘাঁটলেই দেখবেন মাহসা আমিনীর আইনজীবী সরকারী তদন্তের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন (https://english.alarabiya.net/.../Family-rejects-Iran-s... )। সরকারী রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে মাহসা আমিনীর মৃত্যুর সাথে তার গ্রেফতারের কোন সম্পর্ক নেই। মাহসা আমিনীর পিতা মাতা বিভিন্ন সাক্ষাতকারে তাদের কন্যার মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করে আসছে। এরকম কোন বক্তব্য একটা পুলিশী রাষ্ট্রে দেয়া সম্ভব? আমি ওমানের মত একটা উদার রাষ্ট্রে বসবাস করেছি এবং দেখেছি মানুষ সাধারন আলাপচারিতায়ও ওমানের রাজার সমালোচানা করতে কেমন সতর্ক থাকে। যাকে সাধারন ট্যাক্সিচালক মনে হয়েছে, পরে দেখি সে একদিন তার পরিচয়পত্র বের করল, সে সরকারী গুপ্তচর। ওখানে এমনভাবে গুম করা হয় যে পরিবারও তার খোঁজ নিতে ভয় পায়।

পাশ্চাত্যের মিডিয়ায় ইরানে এখন পর্যন্ত সরকারের হাতে ৩২ জন অপ্রাপ্তবয়ষ্ক সহ মোট ২৪০ জন নিহত হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। এসব খবরের সুত্র কী? সুত্রগুলো হল পাশ্চাত্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ইরাণী মানবাধিকার' সংস্থা, যাদেরকে আমেরিকা ও ইউরোপ পয়সা দিয়ে জিইয়ে রাখে। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের মিডিয়ায় যেটা প্রচার করা হয়না সেটা হল দাঙ্গাবাজদের হাতে ২৪ জন ইরানের নিরাপত্তারক্ষীর শহীদ আর ১২০০ জন আহত হবার খবর। সত্যি ঘটনা হল পাশ্চাত্য যেমনিভাবে সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারী বলে প্রচার চালিয়েছিল তেমনি আজ ইরানের দাঙ্গাবাজদেরও "শান্তিপুর্ণ আন্দোলনকারী" বলে চালাচ্ছে। সিরিয়ার ব্যাপারে তাদের ফানুস ফুটো হয়েছে, ইরানের ব্যাপারেও তাদের মিথ্যার ফানুস ফুটতে বাধ্য।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .