হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালে এক শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে নারীরা মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার জন্য ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচি পালন করেছে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রিমঝিম প্রথমে ফেসবুকে মেয়েদের পথে নামার ডাক দেন। তিনি বলেছিলেন, কলকাতার যাদবপুরে এইট বি বাসস্ট্যান্ডের সামনে জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য। তার সেই পোস্ট ভাইরাল হয়। পরে কলকাতার প্রায় ৩০০টি জায়গায় মেয়েদের রাত দখলের ডাক দেওয়া হয়। এছাড়া দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই সর্বত্র এই ডাক ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক গতকাল ১৫ আগস্ট ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। সেটি সামনে রেখেই বুধবার গভীর রাতে কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের পথে নেমে এসেছিলেন অসংখ্য নারী। ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা ‘রাত দখল করে’পথেই ছিলেন।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, কলকাতার যাদবপুর থেকে নাগেরবাজার, অ্যাকাডেমি চত্বর থেকে শ্যামবাজার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ছিল প্রতিবাদের জোয়ার। কলকাতার বাইরে পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তেও রাতভর প্রতিবাদ হয়েছে।
কিন্তু নারীদের এ উত্তাল প্রতিবাদ চলাকালেই কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হামলা চালায় একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। হামলাকারীদের নিরস্ত করতে পুলিশ লাঠি চার্জ করে ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। জবাবে হামলাকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। তারা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে ও হাসপাতলের সামনে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মধ্যরাতের আগে নারীদের রাত দখল করো আন্দোলনের ডাকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বহু মানুষ আরজি কর হাসপাতালের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ৩১ বছর বয়সী নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে খুনের প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে সেøাগান দেয়। এরই একপর্যায়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১২টার দিকে আরজি করে হাসপাতালের কাছে নারীদের রাত দখলের কর্মসূচির একটি মিছিল চলাকালে একদল লোক হাসপাতালটিতে হামলা চালান। তাদের অনেকের হাতে রড ও লাঠি ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। আরজি করের পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ প্রথমে হামলাকারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। রিমঝিম সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, কোনো ঘটনা ঘটলে কলকাতা তো প্রতিবাদের বার্তা দেয়। সেই ভাবনা থেকে পোস্ট দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, পরিচিতজনরা আসবেন। সেটা যে এরকম আকার নেবে ভাবিনি। এদিকে আন্দোলনের জন্য কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন করা হবে, তা নিয়ে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্যপুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সর্বত্র যথেষ্ট নারী পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আরজি কর সরকারি হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে ৩১ বছর বয়সী ওই নারী চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অনুযায়ী, নির্যাতিতার চোখ, মুখ ও গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত ছিল। ওই ঘটনার পর নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়। ভারত জুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করেন। কলকাতাসহ মুম্বাই এমনকি রাজধানী দিল্লি ও অন্যান্য আরও কয়েকটি নগরীতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। খুনের ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলার ডাক দেয় বিক্ষোভকারীরা। সব চিকিৎসা কর্মীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিও জানায় তারা।