۱۳ آذر ۱۴۰۳ |۱ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 3, 2024
সক্রিয় তাকফিরি গোষ্ঠী
সক্রিয় তাকফিরি গোষ্ঠী

হাওজা / ইসরায়েল তার প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করার জন্য তার টিকে থাকার যুদ্ধে তাকফিরি গোষ্ঠীগুলিকে আবারও একত্রিত করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, দখলদার ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল, যারা সর্বদা তার আগ্রাসন ও ঔপনিবেশিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, গাজা এবং লেবাননে সামরিক ব্যর্থতা ও চরম পরাজয়ের কারণে তারা তাদের উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি নতুন উপায় খুঁজছে।

হিজবুল্লাহ এবং প্রতিরোধের অক্ষের চমকপ্রদ সাফল্য ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকে ক্ষুণ্ন করেছে। ফলস্বরূপ, ইসরায়েল তার প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করার জন্য তার টিকে থাকার যুদ্ধে তাকফিরি গোষ্ঠীগুলিকে আবারও একত্রিত করেছে।

সম্প্রতি সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে পূর্ব এবং উত্তর আলেপ্পোতে আইএসআইএস এবং অন্যান্য তাকফিরি গোষ্ঠীর তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দলগুলো শুধু সিরিয়ার বাহিনীকে আক্রমণই করেনি, বরং দক্ষিণ ফ্রন্টে তীব্রতর করার জন্য তাদের বাহিনীকে সরিয়ে নিয়েছে। এই সমস্ত কর্মকাণ্ডই এর সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, ইহুদিবাদী রাষ্ট্র তার ব্যর্থতার পর এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নতুন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে।

ইসরায়েলের সাথে এই গোষ্ঠীগুলির সম্পর্ক গোপন নয়, তবে ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র এই সংস্থাগুলিকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে।

বর্তমানে সিরিয়ার বিমান বাহিনী এই সন্ত্রাসীদের গতিবিধি বন্ধ করতে এবং তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে; কিন্তু এসব ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে এটাও বোঝা যায় যে এই হামলাগুলো শুধু সিরিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তাদের পরবর্তী টার্গেট হতে পারে ইরাক।

আইএসআইএসের পুরানো কৌশলকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা এই অঞ্চলে একটি নতুন সংকট তৈরি করার একটি চক্রান্ত, যার লক্ষ্য প্রতিরোধ শক্তিকে বিভক্ত করা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জড়ানো।

তাকফিরিদের হঠাৎ এই তৎপরতা স্পষ্ট করে যে এই তথাকথিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইসলামের প্রকৃত চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তাদের লক্ষ্য মুসলমানদের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত এই গোষ্ঠীগুলির এহেন তৎপরতা ইঙ্গিত করে যে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র, তার সরাসরি পরাজয়ের পরে তার বিরোধীদের দুর্বল করার জন্য বিকল্প কৌশল অবলম্বন করছে।

মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তৈরি এই তাকফিরিদের আগ্রাসন ইসরায়েলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা আশ্চর্যজনক যে এই গোষ্ঠীগুলোর কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সম্পদ রয়েছে, যেগুলো তারা মুসলিম দেশের বাহিনী ও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।

প্রশ্ন জাগে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে যদি একই শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করা হতো, তাহলে কি পরিস্থিতি ভিন্ন হতো না? কিন্তু এখানে এটাও স্পষ্ট যে, ইহুদিবাদী ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একটি মহান লক্ষ্য এবং গভীর মতাদর্শের প্রয়োজন, যা এই বর্বর দলগুলোর নাগালের বাইরে। তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদে নয়, বরং মুসলমানদের রক্ত ঝরানোর মধ্যে রয়েছে।

তাহরির আল-শাম নামে পরিচিত দায়েশ ও তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল এই অঞ্চলে পরাজয়ের পর রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে চাপ কমাতে তাদের মাঠে নামিয়েছে। ইহুদিবাদী শাসকদের এই কাজটি প্রমাণ করে যে অবৈধ রাষ্ট্রটি তার অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেমন জনগণের বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলা করতেই ব্যর্থ হয়েছে, পাশাপাশি তার সামরিক শক্তি হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনের বিরুদ্ধে শক্তিহীন হয়ে পড়েছে।

এই পুরো পরিস্থিতির একটি উজ্জ্বল দিক রয়েছে- প্রতিরোধের অক্ষ; বিশেষ করে হিজবুল্লাহ, শুধুমাত্র ইসরায়েল নয়, তার নিয়ন্ত্রিত তথাকথিত বিদ্রোহী প্রক্সিদেরও মুখোশ উন্মোচিত করেছে। হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের ত্যাগ, সংকল্প ও অধ্যবসায় এবং সত্যিকারের জিহাদের উদাহরণ, যা প্রমাণ করে যে ইহুদিবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একা ব্যক্তিগত শক্তি দিয়ে সম্ভব নয়, বরং এর জন্য প্রয়োজন আল্লাহর প্রতি অটুট বিশ্বাস, সামষ্টিক ঐক্য এবং শক্তিশালী আদর্শ।

ইহুদিবাদী ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে এই হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠনগুলোই বাস্তব প্রমাণ যে, শত্রুর সব কৌশল সত্ত্বেও ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের মুক্তির স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলের সচেতন জনগণের সতর্ক উপলব্ধি ইসরায়েল ও তার দালালদের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে।

তাছাড়া এ অঞ্চলের চলমান পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক ভারসাম্যকেই প্রভাবিত করেনি বরং বিশ্বশক্তিগুলোর মনোভাবও প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর এসব তাকফিরি গোষ্ঠীকে পরোক্ষ মদদ এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পিছিয়ে থাকা থেকে বোঝা যায় এই অঞ্চলে তাদের প্রচ্ছন্ন স্বার্থ কী! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা, যারা সন্ত্রাসবাদের অবসানের দাবি করে, তারা আসলে এই

ধরনের গোষ্ঠীকে সমর্থন করে এবং তাদের দমন করার অজুহাতে বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করে এই অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চায়।

তদুপরি, এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে প্রতিরোধ আন্দোলনের সাফল্য কেবল ইসরায়েলের জন্য নয়, তাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের জন্যও একটি বড় ধাক্কা হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে। এই অর্জনগুলি আরও প্রকাশ করেছে যে ইসলামি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো কেবল সামরিক শক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি একটি আদর্শিক ও গণআন্দোলন, যার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং গভীর।

এটাও জরুরী যে মুসলিম উম্মাহর উচিত এই কৌশলগুলো বোঝা এবং ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় তার সম্পদ ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করা।

এই সময়ে ফিলিস্তিনের মুক্তি, আল-কুদস পুনরুদ্ধার এবং প্রতিরোধ জোটের স্থিতিশীলতা কেবল একটি অঞ্চলের সমস্যা নয়, সমগ্র উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য একটি যুদ্ধ।

এ উপলক্ষে মুসলমানরা ঐক্য ও সচেতনতা দেখালে শুধু ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের পরিকল্পনাই ব্যর্থ হবে না, সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস, যেখানে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

রিপোর্ট: মজিদুল ইসলাম শাহ

تبصرہ ارسال

You are replying to: .