হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, দখলদার ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল সর্বদা তার আগ্রাসন ও ঔপনিবেশিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছে; হিজবুল্লাহ, হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যর্থতা ও পরাজয়ের কারণে আজ তারা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে। হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য প্রতিরোধ অক্ষের চমকপ্রদ সাফল্য ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি ও মিথ্যা দম্ভকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, ইসরায়েল নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে এই অঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করার জন্য তার তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোকে আবারো একত্রিত ও সক্রিয় করেছে।
সম্প্রতি সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে পূর্ব এবং উত্তর আলেপ্পোতে আইএস এবং অন্যান্য তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলো শুধু সিরিয়ার বাহিনীকে আক্রমণ করেনি বরং দক্ষিণ ফ্রন্টে তীব্রতর করার জন্য তাদের বাহিনীকে সরিয়ে নিয়েছে। এই সমস্ত কর্মকাণ্ডই সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, ইহুদিবাদী রাষ্ট্র তার ব্যর্থতার পর এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নতুন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। ইসরায়েলের সাথে এই গোষ্ঠীগুলির সম্পর্ক এখন আর গোপন নয়, ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র এই সংস্থাগুলিকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
এই মুহুর্তে সিরিয়ার বিমান বাহিনী এই সন্ত্রাসীদের গতিবিধি বন্ধ করতে এবং তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে; কিন্তু এসব ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে এটাও বোঝা যায় যে এই হামলাগুলো শুধু সিরিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, তাদের পরবর্তী টার্গেট হতে পারে ইরাক।
ISIS-এর পুরানো কৌশল পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা এই অঞ্চলে একটি নতুন সংকট তৈরি করার একটি চক্রান্ত, যার লক্ষ্য প্রতিরোধ শক্তিকে বিভক্ত করা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত ও ব্যতিব্যস্ত রাখা।
তাকফিরিদের তৎপরতা স্পষ্ট করে যে এই দলগুলো ইসলামের প্রকৃত চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তাদের লক্ষ্য মুসলমানদের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়। ইসরায়েলের পরাজয়, সিরিয়ায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে এই গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা ইঙ্গিত দেয় যে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির মুখোমুখি যুদ্ধে পরাজয়ের পর তার বিরোধীদের দুর্বল করার জন্য বিকল্প কৌশল অবলম্বন করছে। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তৈরি এই তাকফিরিদের আগ্রাসন ইসরায়েলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা আশ্চর্যজনক যে এই গোষ্ঠীগুলোর কাছে উন্নত অস্ত্র ও সম্পদ রয়েছে, যেগুলো তারা মুসলিম দেশগুলোর বাহিনী ও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। গত ১৪ মাস ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও নিষ্ঠুরতম বর্বরতা চালালেও এই গোষ্ঠীগুলো নিজেদের অস্ত্র ও শক্তি মাজলুম ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেনি। অথচ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিরোধ যুদ্ধে যদি একই শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করা হতো, তাহলে কি পরিস্থিতি ভিন্ন হতো না? এটা স্পষ্ট যে, ইহুদিবাদী ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একটি মহান লক্ষ্য এবং সুগভীর আদর্শের প্রয়োজন, যা এই বর্বর দলগুলোর আওতার বাইরে। তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদে নয়, বরং মুসলমানদের রক্ত ঝরানো ও সম্পদ বিনষ্টের মধ্যে রয়েছে।
তাহরির আল-শাম নামে পরিচিত দায়েশ (আইএস) ও তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও ইঙ্গিত দেয় যে ইসরায়েল এই অঞ্চলে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পরাজয়ের পর রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে চাপ কমাতে তাদের মাঠে নামিয়েছে, অথচ কদিন আগেও তাদের তৎপরতা মিয়মান ছিল। এই সময়ে উগ্র তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোকে হাতিয়ার করার মধ্য দিয়ে এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেমন জনগণের বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের সামরিক শক্তি হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনের বিরুদ্ধে শক্তিহীন হয়ে পড়েছে।
এই পুরো পরিস্থিতির একটি উজ্জ্বল দিক রয়েছে- তা হলো প্রতিরোধ অক্ষ, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ, শুধুমাত্র ইসরায়েল নয়, তার প্রক্সিদেরও মুখোশ উন্মোচিত করেছে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ত্যাগ, সংকল্প, অধ্যবসায় এবং মুসলমানদের শত্রু ও জালিম বিরোধী সত্যিকারের জিহাদের উদাহরণ; যা প্রমাণ করে যে ইহুদিবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একা ব্যক্তিগত শক্তি দিয়ে সম্ভব নয়, বরং এর জন্য প্রয়োজন আল্লাহর প্রতি অটুট বিশ্বাস, সামষ্টিক ঐক্য এবং শক্তিশালী আদর্শ।
তদুপরি, এটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে প্রতিরোধ আন্দোলনের সাফল্য কেবল ইসরায়েলের জন্য নয়, তাদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের জন্যও একটি বড় ধাক্কা হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে। এই অর্জনগুলি আরও প্রকাশ করেছে যে প্রতিরোধ কেবল সামরিক শক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি একটি আদর্শিক ও গণআন্দোলন, যার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং গভীর।
এটাও জরুরী যে মুসলিম উম্মাহর উচিত ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের এই সুপরিকল্পিত কৌশলগুলো বোঝা এবং ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নিজেদের সম্পদ ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করা। এই সময়ে ফিলিস্তিনের মুক্তি, আল-কুদস পুনরুদ্ধার এবং প্রতিরোধ জোটের স্থিতিশীলতা কেবল একটি অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য একটি যুদ্ধ। সুতরাং মুসলমানরা ঐক্য ও সচেতনতা দেখালে শুধু ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের পরিকল্পনাই ব্যর্থ হবে না, সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস, যেখানে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
রিপোর্ট: রাসেল আহমেদ রিজভী