হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী: সৈয়দ ইব্রাহিম খলিল রিজভী উক্ত বিষয় সম্পর্কে বলেন: পর্ব ১- শিরক ও বিদ্’আত এ শব্দ দু’টি এমন যা বার বার ওহাবীদের পক্ষ থেকে মানুষের চিন্তা ও মননে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এ শব্দগুলোর প্রচার মুসলমানদের মাঝে এত বেশী হয়েছে যে, ওহাবীদের পাশাপাশি সাধারণভাবে এ শব্দগুলোর ভুল প্রয়োগ হচ্ছে। সে কারণে বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ যদিও এখানে নেই তথাপি সংক্ষিপ্তাকারে হলেও বিষয়টির উপর আলোকপাত করা উচিত বলে আমি মনে করি।
বিদ্’আত শব্দটি ইদানিংকালে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে দেখা যায়। মূলতঃ তিনটি অর্থে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এক হচ্ছে ‘উরফী’ অর্থাৎ, পরিভাষাগত অর্থ। শরীয়তের ভিত্তিতে এর কোন গুরুত্ব নেই। কেননা কোন শব্দের অতিরিক্ত ভূল প্রয়োগ কিংবা ব্যবহারও ‘উরফী’ রূপ লাভ করতে পারে। এ মূহুর্তে উক্ত ‘উরফী বা পরিভাষাগত অর্থের ব্যবহার সম্পর্কে বাহাস করার প্রয়োজন মনে করছি না। যেটা আলোচনার বিষয় তাহলো আভিধানিক ও শরীয়ত অনুমোদিত পরিভাষা।
‘বিদ্’আত’ আভিধানিক অর্থেঃ
বিদ্’আত আরবি শব্দ। আরবি ভাষার অভিধানে বিদ্’আত এমন কর্ম সম্পাদন করাকে বুঝায় যার পূর্ববতী কোন দৃষ্টান্ত নেই। পবিত্র কুরআনের আয়াতেও অভিধানের উপরোক্ত অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন ঃ ইরশাদ হচ্ছে بدیع السماوات والارض (سوره انعام ایت ১০১) অর্থাৎ “এবং তিনি (আল্লাহ্) নভোমন্ডলী ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা ”(সূরা আনআমঃ ১০১)।
অত্র সূরায় ‘বদী’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার উৎপত্তি ‘বিদা’ শব্দ থেকে এবং এর অর্থ হচ্ছে সৃষ্টি, আবিষ্কার ইত্যাদি। এখানে জানা উচিৎ যে, প্রত্যেক সৃষ্টি বা আবিষ্কারকে ‘ইবদা’ বা ‘বিদা’ বলা হয় না। বরং তাকে বলা হয় যা পূর্বে ছিল না। (কামুছে কুরআন খঃ ১, পৃঃ ১৭১)
পবিত্র কুরআন নবী করিম (সাঃ) সম্পর্কে ইরশাদ করছে “ قل ما کنت بدعا من الرسل ( سوره الاحقاف ایت ৯) অর্থাৎ, তুমি বল, আমি তো কোন অভিনব রাসূল নই...” (সূরা আহযাবঃ ৯)।
আলোচ্য আয়াতে ‘বিদ্’আত” শব্দটি যার উপমা নেই এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। (কুরআনের টিকা পৃঃ ১০৩৮, আল্লামা জাওয়াদী)। এখানে বলা হচ্ছে, তুমি বল,আমি তো কোন অভিনব বা নুতন কোন রাসূল নই, বরং আমার পূর্বেও নবী রাসূলের আগমন হয়েছে। উক্ত দুটি আয়াতে ‘বিদ্’আত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে। অভিধানে যেমন ‘বিদ’আত’ শব্দের অর্থ নুতন কিছুর প্রকাশ বা আবিষ্কার। তাহলে কি কোন রকম বাধ্য-বাধকতা ও শর্ত ব্যতিরেকে আভিধানিক অর্থকে মেনে নেয়া যাবে এবং প্রত্যেক নুতন জিনিস বা আবিষ্কারকে হারাম বলা হবে? মানবজীবন সর্বদা পরিবর্তনশীল ও উন্নতির দিকে ধাবমান এবং তা নুতন আবিষ্কারের সাথে সম্পৃক্ত। তাহলে কি সকল বিষয় যা নুতন আবিষ্কার হিসেবে গণ্য ‘বিদ্’আত’ আখ্যায়িত করে তা প্রতিরোধ করতে হবে ? তাহলে তো বিমানের সাহায্যে হাজী সাহেবদের হজ্ব যাত্রাও হারাম বলে পরিগণিত হবে। কেননা বিমানে ভ্রমণ একটি নুতন আবিষ্কার। নবী (সাঃ)-এর যুগে বিমান ছিল না। সুতরাং যাবতীয় নুতন আবিষ্কারকে ‘বিদ্’আতে’ শারয়ী বলা যাবে না যদিও তা আভিধানিক অর্থে ‘বিদ্’আত’।...চলবে...