۲۸ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۹ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 17, 2024
হযরত মুহম্মাদ (সা.)
হযরত মুহম্মাদ (সা.)

হাওজা / মহানবী (সা.)-এর একমাত্র কন্যাসন্তান হযরত ফাতিমা (আ.) পিতার শয্যার পাশে বসেছিলেন এবং তাঁর উজ্জ্বল মুখমণ্ডলের দিকে তাকাচ্ছিলেন।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ২- দাঁত মুবারক মিসওয়াক

মহানবী (সা.) রাতের বেলা ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে জাগার পর মিসওয়াক করতেন। মহানবীর মিসওয়াক আরাক কাঠের ছিল, যা দাঁতের মাড়ি মজবুত করা এবং ময়লা ও খাদ্যকণা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। একদিন হযরত আয়েশার ভাই আবদুর রহমান একটি সবুজ ও তাজা ডাল হাতে নিয়ে মহানবী (সা.)-কে দেখতে আসেন। হযরত আয়েশা মহানবীকে ঐ ডালটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারলেন, তিনি ডালটি দিয়ে মিসওয়াক করতে চাচ্ছেন। তাই তিনি তা নিয়ে মহানবীর হাতে রাখলেন। আর তখন মহানবী খুব যত্নের সাথে দাঁত মিসওয়াক করলেন।

মহানবী (সা.)-এর অন্তিম ওসিয়ত

মহানবী (সা.) অসুস্থ থাকার দিনগুলোয় প্রয়োজনীয় বিষয়াদি স্মরণ করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন এবং তাঁর অসুস্থতার শেষ দিনগুলোয় নামায এবং দাস-দাসীদের সাথে সদাচরণ করার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন : “তোমরা দাস-দাসীদের সাথে সদাচরণ করবে, তাদের খাবার ও পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল রাখবে, তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলবে এবং মানুষের সাথে সুন্দরভাবে মেলামেশা ও জীবন যাপন করবে।”

একদিন কা’ব আল আহবার দ্বিতীয় খলীফাকে জিজ্ঞেস করলেন : “মহানবী (সা.) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অবস্থায় কী বলেছিলেন?” দ্বিতীয় খলীফা সভায় উপস্থিত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন : “আপনি তাঁকে জিজ্ঞেস করুন।” আলী (আ.) বললেন : “মহানবী (সা.)-এর মাথা যখন আমার কাঁধের উপর রাখা ছিল, তখন তিনি বলছিলেন: (الصّلوة الصّلوة) নামায, নামায।” এ সময় কা’ব বললেন : “পূর্ববর্তী নবীগণও এ পদ্ধতির ওপর বহাল ছিলেন (অর্থাৎ তাঁরাও ওফাতকালে নামাযের ব্যাপারেই তাঁদের উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছিলেন)।”

জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোয় মহনবী (সা.) চোখ খুলে বললেন : “আমার ভাইকে ডাক যাতে সে এসে আমার শয্যার পাশে বসে।” সবাই বুঝতে পারলেন, তাঁর এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছেন আলী। আলী (আ.) তাঁর শয্যার পাশে এসে বসলেন। তিনি অনুভব করলেন, মহানবী (সা.) বিছানা থেকে উঠতে চাচ্ছেন। আলী (আ.) মহানবীকে বিছানা থেকে উঠালেন এবং নিজের বুকের সাথে তাঁকে হেলান দিয়ে ধরে রাখলেন।

আর ঠিক তখনই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার লক্ষণগুলো মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহে প্রকাশ পেল। এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞেস করেছিল : “মহানবী (সা.) কার বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন?” তখন ইবনে আব্বাস বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) আলীর কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।” ঐ লোকটি আবার বলল : “হযরত আয়েশা দাবী করেন, মহানবী তাঁর বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।” ইবনে আব্বাস হযরত আয়েশার কথা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) হযরত আলীর কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আর আলী ও আমার ভাই ফযল তাঁকে গোসল দিয়েছেন।”

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) তাঁর এক ভাষণে এ বিষয় স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন :

و لقد قُبض رسول الله و إنّ رأسه لعلي صدرى... و لقد ولّيت غسله و الملائكة أعوانِى

“মহানবী (সা.) আমার বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন... আমি তাঁকে গোসল দিয়েছি এবং ঐ অবস্থায় ফেরেশতারা আমাকে সাহায্য করেছেন।”

কতিপয় মুহাদ্দিস বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.) তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে সর্বশেষ যে কথা বলেছিলেন, তা ছিল لا، مع الرّفيق الأعلي (না, বরং সবচেয়ে মহান বন্ধুর সাথে) যেন ওহীর ফেরেশতা তাঁর রূহ কবজ করার সময় তাঁকে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে এ পার্থিব জগতে প্রত্যাবর্তন বা ফেরেশতা কর্তৃক তাঁর রূহ কবজ করা ও অন্য জগতে (বারযাখে) দ্রুত চলে আসার মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিলে তিনি এ বাক্য বলে ফেরেশতাকে জানিয়েছিলেন, তিনি মৃত্যুপরবর্তী জগতে চলে যেতে এবং সেখানে নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের সাথে বসবাস করতে চান।

)فأولئك مع الّذين أنعم الله عليهم من النّبيّين و الصّدّيقين و الشّهداء و الصّالحين و حسن أولئك رفيقا(

“তাঁরা ঐ ব্যক্তিদের সাথে আছেন যাঁদের ওপর মহান আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন; আর এসব অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ হচ্ছেন নবী, পরম সত্যবাদী, শহীদ ও সৎকর্মশীল বান্দাগণ এবং তাঁরা কত (উত্তম) ভালো বন্ধু!”

মহানবী (সা.) এ বাক্য বললেন এবং সাথে সাথে তাঁর দু’চোখ ও ওষ্ঠ বন্ধ হয়ে গেল।

মহানবী (সা.)-এর ওফাত দিবস

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র মহান আত্মা ২৮ সফর সোমবার দুপুর বেলা চিরস্থায়ী আবাসস্থলের দিকে উড়ে যায়। তখন তাঁর পবিত্র দেহ একটি ইয়েমেনী চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং অল্প সময়ের জন্য কক্ষের এক কোণে রেখে দেয়া হয়। মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীগণের বিলাপ এবং নিকটাত্মীয়গণের ক্রন্দনধ্বনি শুনে বাইরে অবস্থানরত জনতা নিশ্চিত হন যে, মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মহানবী (সা.)-এর ওফাতের সংবাদ সমগ্র মদীনা নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর কতিপয় কারণবশত ঘরের বাইরে চিৎকার করে বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) মৃত্যুবরণ করেন নি এবং তিনি মূসা (আ.)-এর মতো মহান আল্লাহর কাছে গেছেন” এবং এ ব্যাপারে তিনি মাত্রাতিরিক্ত তাকীদ দিতে লাগলেন এবং তিনি একদল জনতাকে তাঁর অভিমতের সমর্থকও প্রায় বানিয়ে ফেলেছিলেন। ইত্যবসরে মহানবী (সা.)-এর একদল সাহাবী নিম্নোক্ত আয়াত হযরত উমরকে পাঠ করে শোনালেন :

و ما محمّد إلّا رسول قد خلت من قبله الرسل أفأن مات أو قُتل انقلبتم علي أعقابكم

“মুহাম্মদ কেবল আল্লাহর রাসূল; তাঁর আগে রাসূলগণ গত হয়ে গেছেন। যদি তিনি ইন্তেকাল করেন বা নিহত হন, তা হলে কি তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে?”

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহ মুবারক গোসল দেন এবং কাফন পরান। কারণ মহানবী (সা.) বলেছিলেন : “আমার সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি আমাকে গোসল দেবে।” আর এ ব্যক্তি আলী ব্যতীত আর কেউ ছিলেন না। যা হোক, এরপর তিনি মহানবীর পবিত্র মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করলেন। তখন তাঁর দু’নয়ন বেয়ে প্লাবনের মতো অশ্রু ঝরছিল। তিনি তখন এ কথাসমূহ বলছিলেন : “আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন। আপনার ওফাতের মাধ্যমে নবুওয়াতের সূত্র ছিন্ন এবং মহান আল্লাহর ওহী ও আকাশের (ঊর্ধ্ব জগতের) খবরা-খবর বন্ধ হয়ে গেল, যা অন্য কারো মৃত্যুতে কখনো বন্ধ হয় নি। আপনি যদি আমাদের অপ্রীতিকর অবস্থায় ধৈর্যধারণ করার আহবান না জানাতেন, তা হলে আমি আপনার বিচ্ছেদে এতটা কাঁদতাম ও অশ্রু ঝরাতাম যে, এর ফলে আমি অশ্রুর উৎসই শুষ্ক করে ফেলতাম। তবে এ পথে আমাদের দুঃখ ও শোক সর্বদা বিদ্যমান থাকবে। আপনার পথে এ পরিমাণ শোক আসলে নগণ্য এবং এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন। আমাদেরকে আপনি পরলোকে স্মরণ করুন এবং স্মরণে রাখুন।”

সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর জানাযার নামায আদায় করেন, তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)। অতঃপর মহানবী (সা.)-এর সাহাবীগণ দলে দলে এসে তাঁর জানাযার নামায আদায় করলেন। আর এ অনুষ্ঠান মঙ্গলবারের দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, মহানবী (সা.) যে কক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে। তাঁর কবর আবু উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ্ এবং যাইদ ইবনে সাহল প্রস্তুত করেছিলেন। হযরত আলী (আ.), ফযল ও আব্বাসের সহায়তায় রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর দাফন কাজ সম্পন্ন করেন।

পরিণামে, যে ব্যক্তিত্ব তাঁর নিরলস আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানব জাতির ভাগ্যে পরিবর্তন এনেছিলেন এবং তাদের সামনে সভ্যতার এক নতুন ও উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবতারণা করেছিলেন, তাঁর ইহজীবন-সূর্য অস্ত গেল। তাঁর ওফাতের সাথে সাথে তাঁর মহতী রিসালতী মিশন অব্যাহত রাখা এবং তাঁর মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা ও সমস্যার উদ্ভব হয়, যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রকট সমস্যা ছিল খিলাফত ও মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব বিষয়ক সমস্যা। মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের আগেই মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভক্তির লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

ইসলামের ইতিহাসের অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ এ অধ্যায় আমাদের এ আলোচনার বিষয়বস্তুর [ইসলামের আজীমুশশান নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ] গণ্ডির বাইরে। তাই আমাদের আলোচনা এখানেই শেষ করছি এবং এ মহান নেয়ামতের জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। (সংগৃহীত)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .