۳۱ اردیبهشت ۱۴۰۳ |۱۲ ذیقعدهٔ ۱۴۴۵ | May 20, 2024
শা'বান মাসের ফজিলত ও মর্যাদা
শা'বান মাসের ফজিলত ও মর্যাদা

হাওজা / শা'বান মাস খুবই ফজিলত ও কল্যাণের মাস নবী করিম (স.) বলেছেন: “শা'বান মাস আমার মাস।”

ধন্যবাদান্তে: আলিরেজা (রানা)

হযরত ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বির (আঃ) বলেছেনঃ “রাত সমূহের মধ্যে কদ্বরের রাতের পর ১৫ই শা'বানের রাত হল সর্বোত্তম রাত।”

এই মাসে এমন এক শিশু জন্ম নিয়েছেন যাঁর দ্বারা আল্লাহ তাবারক ও তায়া’লা সমস্ত অত্যাচারিতদের সাহায্য করবেন এবং তার মাধ্যমে জমিনকে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারে পরিপূর্ণ করবেন এবং অন্যায় ও অত্যাচারকে নিঃশেষ করবেন।

শা'বান মাস রমদ্বান মাসে প্রবেশ করার ভূমিকা, আল্লাহর আতিথ্যে প্রবেশ করার পূর্বে মু’মিনদের এই মাস থেকে প্রস্তুতি নেওয়া কর্তব্য।

অতএব আমাদের উচিৎ আল্লাহর সাহায্য কামনার মাধ্যমে ঐক্যন্তিকতার সাথে তাঁর নৈকট্য অর্জন করার জন্য পরিপূর্ণ চেষ্টা করা।

শা'বান মাসের আমল

১. রোযাঃ

রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়েছে আল্লাহর নবী (সঃ) এই মাসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোযা রাখতেন এবং রমদ্বানের রোযার সাথে নিজের রোযাকে মিলিয়ে দিতেন।

হযরত নবী করিম (সঃ) বলেছেনঃ শা'বান মাস আমার মাস যে এই মাসে একটি রোযা রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

প্রথম ইমাম হযরত আলী (আঃ) বলেছেনঃ শা'বান ও রমদ্বান দুই মাসের রোযা রাখা হল আল্লাহর নিকট তওবাহ্ করা (ক্ষমা প্রার্থনা ও পুনরায় গুণাহে প্রত্যাবর্তন না করার শপথ করা ও মার্জনা চেয়ে নেওয়ার শামিল।

ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদিক্ব (আঃ) বলেছেনঃ যখন হযরত নবী করিম (সঃ) শা'বান মাসের (হেলাল) চাঁদ দেখতেন এক ব্যক্তিকে আদেশ দিয়ে বলতেন যে মদীনাবাসীদের কানে এ আহ্ববান পৌঁছে দাও যে, আমি আল্লাহর রসূল (সঃ)-এর তরফ থেকে এসেছি শা'বান মাসের চাঁদ উদয়ের খবর তোমাদের নিকটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং নবী (সঃ) ও বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছেনঃ জেনে রাখ! শা'বান মাস আমার মাস, আল্লাহ তার উপর রহমত বষর্ণ করুন যে এই মাসে আমাকে সাহায্য করবে অর্থাৎ রোযা রাখবে।

প্রথম ইমাম হযরত আলী (আঃ) বলেছেনঃ যখন থেকে রসূল (স.)-এর আহ্ববানকারীর এ আহ্ববান শুনেছি যে; “শা'বান মাস আমার মাস আল্লাহ তার উপর রহমত বষর্ণ করুন যে এই মাসে আমাকে সাহায্য করবে অর্থাৎ রোযা রাখবে।”

তখন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত কোন দিন এই রোযা গুলি ত্যাগ করেনি।

ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদিক্ব (আঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি শা'বান মাসের প্রথম দিনে রোযা রাখবে তার উপর জান্নাত ফরজ আর যে দুদিন রোযা রাখবে আল্লাহ তায়া’লা দিবারাত্রি তার প্রতি দৃষ্টি দান করেন আর এই দৃষ্টি জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখবেন; যে তিন দিন রোযা রাখবে আল্লাহ তাকে নিজের আরশের নিকট স্থান দেবেন ও জান্নাত প্রদান করবেন।”

হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আঃ) থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদীসে আছেঃ রসূল (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই মাসে একটি রোযা রাখবে কেয়ামতের দিনে আমি তার জন্য শাফায়া'ত করব আর যে দুটি রোযা রাখবে তার পূর্বের গুণাহ ক্ষমা করা হবে আর যে তিনটি ও তার অধিক রোযা রাখবে তার জন্য আসমান থেকে ধ্বনি আসবে যে, হে আমার বান্দা! তোমার নিজের আমল প্রথম থেকে আরম্ভ কর তোমার সমস্ত গুণাহ মাফ হয়ে গিয়েছে।

অষ্টম ইমাম আলীরেযা (আঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে ব্যক্তি শা'বান মাসের শেষে তিনটি রোযা রাখবে আর রমদ্বান মাসের রোযার সাথে সংযুক্ত করবে, আল্লাহ্‌ তাকে পরস্পর দুই মাস রোযার রাখার সমতুল্য সওয়াব প্রদান করবেন।

২. ইস্তেগফারঃ

প্রতিদিন সত্তর বার এই দু'য়া পড়া:

اَسْتَغْفِرُ اللّهَ وَاَسْئَلُهُ التَّوْبَةَ

উচ্চারণ: “আস্তাগ্বফিরুল্লাহা ওয়া আস আলুহুত-তাওবাহ্”

প্রতিদিন সত্তর বার এই দু'য়া পড়া:

اَسْتَغْفِرُاللّهَ الَّذى لا اِلهَ اِلاّ هُوَ الرَّحْمنُ الرَّحیمُ الْحَىُّ الْقَیّوُمُ وَ اَتُوبُ اِلَیْهِ

উচ্চারণ: “আস্তাগ্বফিরুল্লাহাল লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়ার রহমানুর রহীম আল হাইয়্যুল ক্বইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলাইহি।”

রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি প্রতিদিন এই মাসে সত্তর বার ইস্তিগফার করবে অন্য মাসে সত্তর হাজার বার ইস্তিগফার করার সমতুল্য।”

তাওবাহ্ কি ভাবে করা উচিত:

রেওয়ায়েতে হযরত নবী করিম (স.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত রসূল (সঃ) একদা যিলক্বাদাহ্ মাসের সোমবার নিজের গৃহ থেকে বের হয়ে বললেন:

হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে কে তাওবাহ্ করতে চায়? বর্ণনা কারী বলেন: আমরা সকলেই মিলে বললাম আমরা সকলে তাওবাহ্ করতে চাই।

অতপর হযরত নবী করিম (সঃ) বললেনঃ গোসল করবে, ওযু করবে, চার রাকা'ত (দুই দুই রাকা'ত করে) নামায পড়বে,

প্রতি রাকা'তে একবার সূরা আল-হামদ, তিনবার সূরা তৌহীদ (ক্বুল হুল্লাহু) এবং একবার একবার করে সূরা নাস (কূল আয়ূযু বি রব্বিন্নাস) ও সূরা ফালাক্ব (ক্বুল আয়ূ'যু বি রব্বিল ফালাক্ব) পড়বে অতপর সত্তর বার ইস্তিগফার করবে এবং ইস্তিগফারের পর এই বাক্যকে মিলিয়ে পড়বে।

لاَ حَولَ وَ لاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِاللهِ العَلِیِ العَظِیم

উচ্চরণ: লা হাওলা ওয়া লা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আ'লীয়িল আ'যীম।

অতপর এই দু'য়া পড়বেঃ

یاَ عَزِیزُ یاَ غَفاَرُ اِغفِرلِی ذُنُوبِی وَ ذُنُوبَ جَمِیعِ المُؤمِنِین وَ المؤمناتِ فإنّهُ لاَیَغفِرُ الذُّنُوبَ اِلاَّ اَنتَ.

উচ্চারণ: “ইয়া আ'যীযু ইয়া গ্বফ্ফারু ইগ্বফিরলী যুনূবী ওয়া যুনূবা জা’মীয়ি'ল মূ'মিনীনা ওয়াল মু'মিনাতি ফা ইন্নাহু লা-ইয়াগ্বফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা।”

অতপর বললেন: আমার উম্মতের এমন কোন ব্যক্তি নেই যে এই আমল করবে কিন্তু তার জন্য আসমান থেকে ধ্বনি আসবে না যে, হে আমার বান্দা! তোমার নিজের আমল প্রথম থেকে আরম্ভ কর তোমার তাওবাহ্ কবুল হয়ে গিয়েছে তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।

এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূলের নিকটে প্রশ্ন করে: যদি কেউ এই মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে (সময়ে) এই আমল করে তার জন্য কি কোন উপহার আছে?

তিনি (স.) উত্তরে বললেনঃ অবশ্যই আছে, যা কিছু বলেছি তাই তার জন্যও আছে।

৩. শা'বান মাসের মুনাজাতঃ

পবিত্র শা'বান মাসে পড়ার জন্য শা'বানের মুনাজাত বিশেষ ভাবে বর্ণনা হয়েছে এই মুনাজাতে আল্লাহ তায়া'লার অতি মহত্বপূর্ণ গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। এই মাস ছাড়া অন্য সময় পড়া ও অতি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতুল্লাহ্ খোমেনী (রহ.) বলেনঃ আমরা গর্বিত এজন্য যে, জীবন দানকারী (প্রার্থনা) দু'য়া যাকে ক্বুরআনে সাঈদ (قرآن صاعد) অর্থাৎ: “উর্ধ্বগামী ক্বুরআন” বলা হয়েছে তা আমাদের পবিত্র ইমামদের নিকট থেকে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের নিকটে ইমামদের মুনাজাতে শা'বানীয়া, ইমাম হোসায়েন (আ.)-এর দু'য়া-এ-আ'রাফাত, যাবূরে আলে মুহাম্মাদ (সঃ), সাহিফায়ে সাজ্জাদীয়া ও সাহিফায়ে ফাতিমা (আ.) যে আল্লাহর তরফ হতে হযরত যাহরা (সাঃআঃ)-এর নিকটে ইলহাম হয়ে ছিল আমাদের ইমামগণ (আ.)-এর নিকট হতে বর্ণনা হয়েছে।

মুনাজাতে শা'বানীয়া এমন একটি মুনাজাত যদি তা নিয়ে কেউ চিন্তা করে, তাহলে সে এক উচ্চস্থানে পৌঁছাতে পারে। যারা এই দু'য়া পড়তে চান মাফাতিহুল জিনানে শা'বান মাসের যৌথ আমাল অধ্যায় দেখতে পারেন, দু'য়া এই বাক্যে আরম্ভ হয়ঃ

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلیٰ مُحَمَّدِ وَّ آلِ مُحَمَّد وَ اسمَع دُعَائی اِذَا دَعَوتُکَ.....

উচ্চরণ: “আল্লাহুম্মা সল্লিআ'লা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আ-লি মুহম্মাদিউঁ ওয়াসমা’ দু'য়া-য়ী ইযা দায়া'ও তুকা...”

অর্থাৎ: “হে আল্লাহ! মুহম্মাদ ও তাঁর বংশধরের উপর শান্তি বষর্ণ করুন, যখন আমি দু'য়া করি আপনি আমার দু'য়া (প্রার্থনা)কে শোনেন।”

৪. এক হাজার বার জিকর করা:

এই মাসে এই জিকর এক হাজার বার পড়া:

لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَ لاَ نَعبُدُ اِلاَّ اِیّاَهُ مُخلِصِینَ لَهٗ الدِّینَ وَ لَو کَرِهَ المُشرِکِینَ

উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ওয়া লাও কারিহাল মুশরিকীন”

এই জিকর পড়া অতি সওয়াবের কাজ তার মধ্যে হাজার বৎসরের ইবাদাতের সওয়াব তার আমল-নামায় লেখা হবে।

৫. দরুদ পড়া :

এই মাসে ব্যপক ভাবে মুহাম্মদ (স.) ও তাঁর বংশধরের উপর দরুদ শরীফ পড়া:

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلیٰ مُحَمَّدِ وَّ آلِ مُحَمَّد

উচ্চরণ: “আল্লাহুম্মা সল্লিআ'লা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আ-লি মুহাম্মাদ”

অর্থাৎ: “হে আল্লাহ! মুহম্মাদ (সঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর শান্তি বষর্ণ করুন।

৬. এই মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার দুই রাকা'ত নামায পড়াঃ

নামায পড়ার নিয়ম: প্রতি রকা'তে সূরা হামদের পরে একশত বার ক্বুল হুল্লাহু আহাদ পড়তে হবে, নামাযের পর দরুদ পাঠ করতে হবে কেন না দু'য়া কবুল হওয়ার জন্য দরুদ শরীফ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।

উল্লেখ্য যে, এই মাসের প্রথম, তৃতীয় ও পনের তারিখের জন্য বিশেষ আমল বর্ণিত হয়েছে।

বিশেষ করে পনের তারিখের রাত্রে,

এই রাত দ্বাদশ ইমাম হযরত মাহ্দী (আ.)-এর জন্মের রাত তাই খুবই কল্যাণকর ও মুবারক রাত।

পঞ্চম ইমাম হযরত মুহম্মদ বাক্বির (আ.)-কে পনের শা'বানের ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে; তিনি (আঃ) উত্তরে বলেনঃ এই রাত ক্বদরের রাতের পরে সর্বোত্তম রাত এই রাতে আল্লাহ তায়া’লা নিজের বান্দাদেরকে কল্যান দান করেন এবং নিজের অনুগ্রহে তাদের পাপ সমূহকে মার্জনা করেন।

৭. সাদক্বাহ্ দেওয়া:

এই মাসে সাদক্বাহ্ দেওয়া, যদিও তার পরিমান কম হোক না কেন, এতে জাহান্নামের আগুন তার থেকে দূরে সরে যায়।

ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদিক্ব (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে এই মাসে সর্বোত্তম আমল কি?

-উত্তরে তিনি (আঃ) বললেনঃ সাদক্বাহ্ দেওয়া ও ইস্তেগফার করা।

অষ্টম ইমাম হযরত আলীরেযা (আঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে ব্যক্তি শা'বান মাসে কিছু সাদক্বাহ্ দেবে যদিও তা অর্ধেক খেজুরই হোক না কেন, আল্লাহ্‌ তার শরীরকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন।

(সুত্রঃ মাফাতীহুল জিনান ও তুহফাতুল আ'ওয়াম)

تبصرہ ارسال

You are replying to: .