۲۲ آذر ۱۴۰۳ |۱۰ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 12, 2024
হযরত আবূ তালিবের ( আ ) ওফাত
হযরত আবূ তালিবের ( আ ) ওফাত

হাওজা / তাঁর নাম আব্দ মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব, কতিপয় ইতিহাসবিদের অভিমত অনুযায়ী ইমরান এবং কতিপয় ইতিহাসবিদের মতে শাইবাহ্ । আর তাঁর কুনীয়াহ ( সম্মানার্থে ব্যবহৃত ডাকনাম যা আবূ বা পিতা,উম্মু বা মাতা , ইবনে বা ছেলে , বিনতে বা মেয়ে প্রভৃতি শব্দ দিয়ে আরম্ভ করা হয় ) আবূ তালিব।

অনুবাদ : মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,

১- তাঁর নাম আব্দ মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব, কতিপয় ইতিহাসবিদের অভিমত অনুযায়ী ইমরান এবং কতিপয় ইতিহাসবিদের মতে শাইবাহ্ । আর তাঁর কুনীয়াহ ( সম্মানার্থে ব্যবহৃত ডাকনাম যা আবূ বা পিতা,উম্মু বা মাতা , ইবনে বা ছেলে , বিনতে বা মেয়ে প্রভৃতি শব্দ দিয়ে আরম্ভ করা হয় ) আবূ তালিব।

মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা) জন্মের ৩৫ বছর আগে হযরত আবু তালিব পবিত্র মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা) পিতা হযরত আব্দুল্লাহর ( আ ) আপন সহদর ভ্রাতা ।

হযরত আব্দুল মুত্তালিবের ( আ ) মৃত্যুর পর কুরাইশ গোত্র প্রধানের পদ ও দায়িত্ব হযরত আবু তালিবের (আ) কাছে অর্পণ করা হয়। তিনি শিশু মহানবীর ( সা ) ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহর (সা ) প্রতি তাঁর প্রগাঢ় মায়া , মমত্ববোধ ও ভালোবাসার কারণে মহানবীর ( সা ) প্রাণ রক্ষার্থে হযরত আবু তালিব ( আ) তাঁর সকল হিম্মত ও প্রচেষ্টা নিয়োজিত করেছিলেন এবং ৪০ বছরের অধিক কাল ধরে তিনি ছিলেন মহানবীর ( সা ) পৃষ্ঠপোষক ও যিম্মাদার।

হযরত আবু তালিব (আ) জীবনে কখনো মূর্তি পূজা করেন নি । বরং তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর আউলিয়া - ই কিরামের অর্থাৎ সম্মানিত ওয়ালীদের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বীয় যুগে তিনি ছিলেন হযরত ইব্রাহীমের (আ) সর্বশেষ ওয়াসী ( ওয়সিয়ৎ বাস্তবায়নের দায়িত্বশীল ও ভারপ্রাপ্ত ) ।

ইমাম মূসা কাযিমকে (আ) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : " হযরত আবু তালিব (আ) কি হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) ওপরও হুজ্জাত ( মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত হিদয়তের প্রামাণিক দলিল ও প্রমাণ ) ছিলেন ? " তিনি ( কাযিম - আ - ) এ প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন : না , তবে তিনি ছিলেন ওয়াসিয়ত সমূহের আমানতদার এবং সেগুলো তিনি মহানবীর (সা) কাছে হস্তান্তর করেন ও পৌঁছিয়ে দেন ।

২ - " তাহলে হযরত আবূ তালিবের (আ) অবস্থা ও পরিণতি কেমন হয়েছিল ? " তিনি ( আ ) জবাবে বলেছিলেন : " হযরত আবূ তালিব (আ) হযরত রাসূলুল্লাহ (সা) ও পবিত্র কুরআনের প্রতি মুমিন ( বিশ্বাসী ) ছিলেন এবং ওয়সিয়ৎ সমূহ (ওয়াসায়া) তাঁর ( সা) কাছে অর্পণ করে এ জগৎ থেকে তিনি বিদায় নিয়েছিলেন । "

হযরত আবু তালিব (আ) সর্বদা মহানবীর (সা) সমর্থক , সংরক্ষক ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তাঁকে ( সা ) রক্ষা ও সাহায্য করার জন্য তিনি কখনো চেষ্টার ত্রুটি করেন নি ।

৩- হযরত জাফার ইবনে আবী তালিব ( রা : ) এবং তাঁর সঙ্গী সাথীরা যারা হাবাশার ( আবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া ) বাদশাহ নাজ্জাশীর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁদেরকে বাদশাহের কাছে অপমানিত ও অপদস্থ ( রুসোয়া ) করে তাঁদেরকে (বাদশাহের কাছ থেকে ) বুঝে নিয়ে শাস্তিদানের জন্য হিযাজে মুশরিকদের কাছে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে আমর ইবনে আস মক্কার মুশরিকদের পক্ষ থেকে হাবাশা গমন করলে হযরত আবূ তালিব (আ) বাদশাহ নাজ্জাশীর কাছে প্রেরিত পত্রে কিছু কবিতা লিখে তাঁকে আশ্রয় গ্রহণকারীদের ব্যাপারে ন্যায়পরাযণতা অবলম্বন ও ইহসান ( দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন ) করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

৪- আর যখন কুরাইশরা হযরত রাসূলুল্লাহকে ( সা) হত্যার সিদ্ধান্ত নিল তখন হযরত আবূ তালিব (আ) এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হন । ঐ সময় আবূ লাহাব অতি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ছিল এবং অন্যরাও তাকে বিশেষ ভাবে বিবেচনা ও মূল্যায়ন করত । আর কুরাইশদের এ হত্যার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত বাস্তবায়িত

হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে হযরত আবূ তালিব (আ) আবূ লাহাবের প্রতি সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে হত্যার এ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ ও ব্যর্থ করে দিয়ে হযরত রাসূলুল্লাহর (সা) প্রাণ রক্ষা করেছিলেন।

৫- হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা ) স্বীয় অস্তিত্ব ও সত্তা দিয়ে হযরত আবূ তালিবের ( আ ) অকুণ্ঠ চিত্তে এ সব আত্মত্যাগ , সহায়তা-সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা অনুভব করেছিলেন এবং এ কারণেই তিনি ( সা ) বিভিন্ন উপলক্ষ্যে স্বীয় পিতৃব্য হযরত আবূ তালিবের ( আ ) প্রতি অত্যন্ত প্রগাঢ় ভালোবাসা ও মহব্বত পোষণ করতেন ।

৬- হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা ) একদা হযরত আক্বীল ইবনে আবীতালিব ( রা ) কে বলেছিলেনঃ আমি তোমাকে দু দিক থেকে যথাঃ ১. আমার সাথে তোমার যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে সেজন্য আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং ২. আমার পিতৃব্য আবূ তালিব তোমাকে ভালোবাসত বলে আমিও তোমাকে ভালোবাসি ।

৭- এত সব আত্মত্যাগের কারণে মহানবী ( সা ) তাঁর প্রশংসা করতেন এবং আবূ তালিবের জন্য মঙ্গল কামনা করতেন । যেমনঃ হযরত রাসূলুল্লাহর ( সা ) চাচা হযরত আব্বাস ( রা ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে হযরত রাসূলুল্লাহকে ( সা ) জিজ্ঞেস করা হলঃ আপনি আবূ তালিবের জন্য কোন্ জিনিস প্রত্যাশা করেন ? তখন তিনি ( সা ) জবাবে বলেছিলেনঃ যে কল্যণ ও মঙ্গল আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি ঠিক সেটাই আমি তাঁর ( হযরত আবূ তালিব ) জন্য কামনা করি ।

৮- মহানবীর ( সা ) পবিত্র আহলুল বাইতও ( আ ) তাঁদের পিতামহ পিতৃপুরুষ হযরত আবূ তালিবকে ( আ ) অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং অগণিত হাদীসে তাঁর আধ্যাত্মিক মর্যাদা সমূহ এবং ঠিক একই ভাবে স্বীয় মহান পিতামহ পিতৃপুরুষ হযরত আবূ তালিবের ( আ ) প্রতি তাদের নিজেদের মুহাব্বত সম্পর্কে কথা বলেছেন । যেমনঃ বর্ণিত হয়েছে যে হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী ( আ ) এক দিন কূফার রাহবায় উপবিষ্ট ছিলেন এবং জনগণ তাঁর চারপাশ ঘিরে রেখেছিল তখন এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বললঃ

৯- “ হে আমীরুল মুমিনীন ! কীভাবে এটা সম্ভব যে আপনি এমন এক স্থানে রয়েছেন যেখানে আপনাকে মহান আল্লাহ অধিষ্ঠিত করেছেন অথচ আপনার পিতা দোযখের আগুনে আযাব ( শাস্তি ) ভোগ করছেন ? “ হযরত আলী ( আ ) তাঁকে বললেনঃ মহান আল্লাহ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন ! ঐ মহান আল্লাহর কসম যিনি হযরত মুহাম্মাদকে ( সা ) প্রেরণ করেছেন আমার পিতা যদি বিশ্বের সকল গোনাহগার পাপীদের জন্য শাফাআত করেন তাহলে মহান আল্লাহ তা কবূল করবেন । “অথবা ইমাম বাক্বির ( আ ) বলেছেনঃ

১০- মহান আল্লাহর কসম ! যখনই মানদণ্ডের একটি পাল্লায় হযরত আবূ তালিবের ঈমান এবং অপর পাল্লায় সকল মানুষের ঈমান রাখা হবে ঠিক তখনই হযরত আবূ তালিবের ঈমান সবার ঈমানের চেয়ে ভারী হবে ।

ইমাম সাজ্জাদ ( আ )ও একটি হাদীসে বলেছেনঃ যখন হযরত খাদীজা ( আ ) এবং হযরত আবূ তালিব ( আ ) মৃত্যু বরণ করেন তখন রাসূলুল্লাহ ( সা ) অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে তিনি তাঁদের ( আ ) স্মরণ করে এই দুঃখ – কষ্ট ও শোকের ব্যাপারে মহান আল্লাহর কাছে নিভৃতে প্রার্থনা করেন এবং মহান আল্লাহ হযরত জিব্রাঈলের ( আ ) মাধ্যমে তাঁকে ওহী করে জানালেনঃ মক্কা থেকে বের হয়ে যাও ( হিজরত কর ) ; কারণ মক্কায় তোমার আর কোন সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক নেই ।

১১- হযরত আবূ তালিবের (আ ) ওফাৎ দিবস ২৬ রজব । আর এ দিবসে তাঁর সুমহান ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাঁর মহৎ চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যাবলী ( ফায়ায়েল ) বর্ণনা করার সবচেয়ে উপযুক্ত সুযোগ ও সময় । হযরত আলী ( আ ) থেকে স্বীয় পিতা ( হযরত আবূ তালিব) ও হযরত খাদীজার ওফাতের মুসিবতে একটি কবিতা বর্ণিত হয়েছেঃ

হে আমার নয়নযুগল ! আবূ তালিব ও খাদীজা যারা ছিলেন অতুলনীয় তাঁদের মহাপ্রয়াণে অশ্রু পাত করতে থাক । আর এই অশ্রুকে তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ মুবারক করে দিন ।

বাতহার নেতা ও মক্কাধিপতির সন্তানের ( আবূ তালিব ) হৃদয়বিদারক রেহলাত ( মহা প্রয়াণ ) এবং নারীদের নেত্রী যিনি নামায আদায়কারী প্রথম নারী ছিলেন তাঁর ( খাদীজা ) ওফাত উপলক্ষ্যে ( শোক জ্ঞাপন করছি )

এ দুজনের রেহলাত ( মহাপ্রযাণ ) ও তাঁদের হারানোর প্রাণান্তকর শোক ও বেদনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছি সমগ্র রজনী

তাঁদের বিয়োগের হৃদয়বিদারক মুসিবতে হয়েছে তিমির ও অন্ধকারাচ্ছন্ন আমাদের দিবস ও রজনী

এ দুজন হযরত মুহাম্মাদের ( সা ) ধর্মকে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে করেছেন সাহায্য ও সহায়তা এবং যালেম ও উদ্ধত বাগীদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে করেছেন সংগ্রাম ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .