۶ آذر ۱۴۰۳ |۲۴ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 26, 2024
ইমাম হযরত জা'ফার সাদিক্বের (আ) শাহাদাত বার্ষিকী
ইমাম হযরত জা'ফার সাদিক্বের (আ) শাহাদাত বার্ষিকী

হাওজা / ২৫ শাওয়াল মহানবীর (সা) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ) ১২ পবিত্র মাসূম ইমামের ( আ ) ষষ্ঠ মাসূম শাইখুল আয়িম্মা ( ইমামদের শেখ ) ইমাম হযরত জা'ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস - সাদিক্বের (আ) শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শোক ও তাসলিয়াত ( সান্ত্বনা) ।

হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

২৫ শাওয়াল মহানবীর (সা) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ) ১২ পবিত্র মাসূম ইমামের ( আ ) ষষ্ঠ মাসূম শাইখুল আয়িম্মা ( ইমামদের শেখ ) ইমাম হযরত জা'ফার ইবনে মুহাম্মাদ আস - সাদিক্বের (আ) শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শোক ও তাসলিয়াত ( সান্ত্বনা) । আহলুল বাইতের (আ) ফিকহী মাযহাব তাঁর নামে জাফারী মাযহাব হিসাবে প্রসিদ্ধি ও খ্যাতি লাভ করেছে। বনী উমাইয়া খিলাফতের পতন ও বনী আব্বাসের খিলাফতের উত্থানকালে - এই অন্তর্বর্তী কালে স্বৈরাচারী খিলাফত প্রশাসনের কর্তৃত্ব দুর্বল ও শিথিল হয়ে পড়লে ইমাম হুসাইনের (আ) পৌত্র আহলুল বাইতের (আ) ৫ম মাসূম ইমাম হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল - বাক্বির ( আ ) ও এবং তাঁর পুত্র ষষ্ঠ মাসূম ইমাম জাফর আস - সাদিক্ব (আ) সাইয়েদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইনের পুত্র আহলুল বাইরের ৪র্থ মাসূম ইমাম হযরত আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদীনের (আ) হাতে পবিত্র মদীনায় প্রতিষ্ঠিত আহলুল বাইতের (আ) ইলমী ফিক্বহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে বিস্তৃত ও প্রসারিত করে বনী উমাইয়ার ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি বিধ্বংসী অপতৎপরতা রোধ করেছিলেন এবং মুসলিম বিশ্ব ও জগৎকে খাঁটি ইসলামী শিক্ষা, তাফসীর ও মহানবীর (সা ) খাঁটি হাদীস এবং সঠিক ইজতিহাদ ভিত্তিক ফিকহ শাস্ত্র উপহার দিয়েছেন যাতে করে বনী উমাইয়া খিলাফতের বিদ'আত , অপসংস্কৃতি ও অশিক্ষা - কুশিক্ষার অপনোদন এবং ভবিষ্যতে আব্বাসীয় খিলাফতের দীর্ঘ আধিপত্য কালে বিজাতীয় গ্রীক , রোমান, পারসিক , মিসরীয় , ভারতীয় ও চৈনিক পৌত্তলিক নাস্তিক্যবাদী মতবাদ, দর্শন , শিক্ষা ও সংস্কৃতির মোকাবেলা করতে সক্ষম হয় । আর এই গুরু দায়িত্ব জাফারী ফিকহ ও মাযহাব এবং মহানবীর (সা ) আহলুল বাইতের (আ) মাসূম ইমামগণ আঞ্জাম দিয়েছেন যাদের শীর্ষে ছিলেন ৫ম মাসূম ইমাম মুহাম্মাদ আল- বাক্বির (আ) ও ষষ্ঠ মাসূম ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আস - সাদিক্ব (আ) উমাইয়া খিলাফতের পতন ও আব্বাসীয় খিলাফতের উত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন উদ্ভূত অল্প কয়েক দশকের মুক্ত পরিবেশের কারণে। কারণ ঐ দুই স্বৈরাচারী খিলাফতের অন্তর্বর্তী কালে প্রশাসন যন্ত্রের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য দুর্বল হয়ে পড়লে আহলুল বাইতের (আ) এ দুই ইমাম ( মুহাম্মদ আল- বাক্বির ও জাফার আস সাদিক্ব ) সক্ষম হয়েছিলেন মুসলিম বিশ্বে খাঁটি ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসার ঘটাতে । কিন্তু তাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মাসূম ইমামগণের পক্ষে বনী উমাইয়া ( উমাভী ) খিলাফত ও আব্বাসীয় খিলাফতের স্বৈরাচারী শ্বাসরুদ্ধকর কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের কারণে তা সম্ভব হয় নি । স্বৈরাচারী উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফত প্রশাসন আহলুল বাইতের ( আ ) ইমামদের ( আ ) কর্মকাণ্ড ও কর্মতৎপরতা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করত এবং বেশির ভাগ সময় ইমামদের অন্তরীন , গৃহবন্দী ও কারাবন্দী করে রাখত এবং অবশেষে তাদেরকে গোপনভাবে বিষপ্রয়োগ করে শহীদ করত । ১৪৮ হিজরীতে দ্বিতীয় আব্বাসীয় খলীফা মানসূর দাওয়ানীকীর পক্ষ থেকে বিষ মিশ্রিত আঙুর খাইয়ে ইমাম জা'ফার আস - সাদিককে ( আ ) ২৫ শাওয়াল মতান্তরে ১৫ রজব শহীদ করা হয় । শাহাদাত কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর ।

মহানবীর (সা) আহলুল বাইতের (আ) মাসূম ইমামদের ( আ ) সীরাত , চালচলন ও জীবনাদর্শ হচ্ছে হুবহু মহানবীর (সা ) সীরাত, চালচলন ও জীবনাদর্শ অর্থাৎ নির্ভেজাল খাঁটি ইসলামী কুরআনী জীবনাদর্শ । কারণ মহানবী( সা ) থেকে মুতাওয়াতির অকাট্য হাদীস - ই সাক্বালাইন অনুসারে তাঁরা ( মহানবী - সা- ও তাঁর পবিত্র আহলুল বাইত - আ -) এবং পবিত্র কুরআন সর্বদা সহ বিদ্যমান এবং পরস্পর হতে কখনো বিচ্ছিন্ন হবেন না এবং এ থেকে প্রমাণিত হয় যে পবিত্র নির্ভুল অভ্রান্ত সহীহ অবিকৃত মাসূম কুরআনের মতো আহলুল বাইত ( আ ) পবিত্র , মাসূম , নির্ভুল , অভ্রান্ত ও সব বিকার- বিকৃতি থেকে পবিত্র ও মুক্ত। করণ হাদীস - ই সাক্বালাইন থেকে পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের (আ) মধ্যে সমতা ও সহবিদ্যমানতা প্রমাণিত হয় এবং উভয় অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত ( আ ) পবিত্র ও মাসূম না হলে এই সমতা ও সহবিদ্যমানতা সম্ভব হবে না ।

প্রতিষ্ঠিত সহীহ হাদীস অনুযায়ী মহানবীর ( সা ) পরে কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর আহলুল বাইত ( আ) থেকে মাত্র বারোজন খলীফা ইমামের আগমন হবে এবং উম্মতকে হেদায়ত করবেন যাদের প্রথম ইমাম হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আ) এবং শেষ ( দ্বাদশ ) ইমাম হযরত মুহাম্মাদ আল - মাহদী ( আ ) । মুতাওয়াতির অকাট্য হাদীস - ই সাক্বালাইনের আলোকে উম্মতের এ বারো ইমাম অবশ্যই আহলুল বাইতের (আ) অন্তর্ভুক্ত হবেন ।

মহানবী (সা) থেকে প্রতিষ্ঠিত সহীহ অকাট্য যুগের ইমামের পরিচিতি ও আনুগত্যের হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে যে ব্যক্তি যুগের ইমামকে না চিনে ( অর্থাৎ তার আনুগত্য না করে ) মৃত্যু বরণ করবে সে জাহেলিয়াতের ওপর মৃত্যু বরণ করবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে।

কারণ মহানবীর (সা ) তিরোধানের পরে কেবল পবিত্র কুরআন ও তাঁর আহলুল বাইত (আ) কিয়ামত পর্যন্ত বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি হতে তাঁর উম্মতের রক্ষাকবচ এ শর্তে যে উম্মত এদুটোকে আঁকড়ে ধরে রাখবে অর্থাৎ সর্বাবস্থায় তারা পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের (আ) অনুসরণ করবে ।

আর এ দুই প্রতিষ্ঠিত সহীহ অকাট্য অভ্রান্ত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে পবিত্র কুরআনের সমকক্ষ মহানবীর ( সা ) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ) অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন এই বারো ইমাম ( আ ) ।

ইমাম জাফার আস সাদিক্ব ( আ ) সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং ৪০০০ এর অধিক আলেম , ফকীহ ও পণ্ডিতকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দান করেছিলেন । স্বয়ং ইমাম হানীফা ও ইমাম মালেক ইমাম জাফার আস সাদিক্বের (আ) শিক্ষানবীশ ছিলেন এবং তাঁর কাছে শিক্ষা ও অধ্যয়ন করেছিলেন । ইসলামী পণ্ডিত ও আলেমগণ ইমাম জাফার আস -সাদিক্বের সুমহান স্বর্গীয় চরিত্র , ব্যক্তিত্ব , জ্ঞান - পাণ্ডিত্যের ভূয়োসী প্রশংসা এবং তাঁকে তাঁর যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে অভিহিত করতেন । মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই মহান ইমাম - ই হুমামের ( আ ) জীবনাদর্শ ও সীরাত অনুসরণের তৌফিক দান করুন।

আমরা তাঁর শাহাদাত বার্ষিকীতে তাঁর জন্য শোকানুষ্ঠান পালন করব ।

ইমাম জাফার আস সাদিক্বকে (আ ) শাহাদাতের পর পবিত্র মদীনার জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে পিতা ইমাম মুহাম্মদ আল-বাক্বির, পিতামহ ইমাম যাইনুল আবিদীন ( আ ) , প্রপিতামহ ইমাম হুসাইনের ভ্রাতা ইমাম হাসান এবং ইমাম আলীর ( আ ) মাতা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদের ( আ ) পাশে সমাহিত ও দাফন করা হয় । তাঁদের প্রতি তাযীম , সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রকাশ স্বরূপ কবরের ওপর সমাধিসৌধ ও ইমারত নির্মাণ করা হয়েছিল যাতে যিয়ারতকারীগণ সর্বাবস্থায় ( শীত গ্রীষ্মে ঝড় , বৃষ্টি বাদল ও বর্ষায় ) এই ইমামদের কবর ও মাযার নির্বিঘ্নে যিয়ারত করতে এবং তাদের কবরের কাছে মহান আল্লাহর ইবাদত - বন্দেগী, যিকর , দুআ - দরূদ , মুনাজাত, তাসবীহ - তাহলীল পাঠ করতে পারেন। অথচ এই মাযার জান্নাতুল বাকীর অন্যান্য মাযার ও সমাধিসৌধ সমেত ওয়াহাবী সৌদী রাজতান্ত্রিক সরকার ও প্রশাসন ১৩৪৪ হিজরীর ৮ শাওয়াল তাখরীব (ধ্বংস ) করে ।

ইমাম জাফার আস -সাদিক্বের (আ ) শাহাদাত দিবসে জান্নাতুল বাকীতে আহলুল বাইতের (আ) ইমামদের মাযার ধ্বংসের কথাও স্মরণ করব । কারণ এ মাযার হচ্ছে ঐ সব গৃহের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো উন্নীত করার অনুমতি মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন যেখানে মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় এবং সকাল - সন্ধ্যায় এমন সব লোক আল্লাহর তাসবীহ পাঠ ( পবিত্রতা ঘোষণা)করেন যাদেরকে পার্থিব ব্যবসায় - বাণিজ্য আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে না ( সূরা -ই নূর : ৩৬-৩৭ ) আর পূণ্যাত্মা আসহাবে কাহাফের কবর সমূহের ওপর মুমিনদের মসজিদ নির্মাণ করার কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং মহানবীর (সা) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ) মাসূম ইমামগণ নি: সন্দেহে আসহাবে কাহাফ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং তাঁদের সমাধিস্থলে মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করা নি: সন্দেহে অধিক কাম্য ও পছন্দনীয়। এছাড়া হযরত আলী ( আ) এই জান্নাতুল বাকীতে নিজ মাতা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদের সমাধির কাছে বাইতুল আহযান ( বাইতুল হুযন অর্থাৎ শোক ও ক্রন্দনের গৃহ ) নির্মাণ করেছিলেন যেখানে হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ ) স্বীয় পিতা রাসূলুল্লাহর ( সা) ওফাতের পর পিতার স্মরণে মৃত্যু পর্যন্ত শোক করতেন ও কাঁদতেন। এ ছাড়া তিনি প্রতি সপ্তাহে উহুদে চাচা হামযা ও শহীদদের কবর যিয়ারত করতে যেতেন এবং হযরত হামযার কবরের পাশে ইবাদত বন্দেগী ও ক্রন্দন করতেন । সুতরাং কুলাঙ্গার ওয়াহাবী সৌদী রাজতান্ত্রিক সরকার কিভাবে আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন পরম সম্মানিত এ সব ইমাম ও ব্যক্তির মাযার ধ্বংস করে চরম বেয়াদবী , অবজ্ঞা , অশ্রদ্ধা , অভক্তি ও অবমাননা প্রদর্শন করেছে যা অন্তরসমূহের তাকওয়া পরিপন্থী এবং তাকওয়া না থাকলে জাহান্নামই হবে সর্বশেষ ঠিকানা। পক্ষান্তরে পূণ্যাত্মাদের সমাধিস্থলে ইমারত , মাযার, বুকা , সৌধ , কুববা ( গোম্বুজ ) নির্মাণ করে সেখানে মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী, শোকানুষ্ঠান পালন ইত্যাদি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মুমিনদের সীরাত ও সুন্নাত এবং হযরত ফাতিমা যাহরার সীরাত ও সুন্নত এবং পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন সমূহের প্রতি ওয়াজিব তাযীমের ( সম্মান প্রদর্শন ) বাস্তবনমূনা যা অন্তরের তাকওয়া সঞ্জাত ।

তাই ইমামদের ( আ ) শাহাদাত দিবসে তাদের স্মরণে শোকানুষ্ঠান পালন আসলে আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শনাদির প্রতি তাযীম ও তাকওয়ারই বহিঃ প্রকাশ ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .