অনুবাদ : হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
بسم الله الرّحمن الرّحیم
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম
এ চিঠিটা ঐ সব যুবক যুবতীদের প্রতি লিখছি যাদেরকে তাদের জাগ্রত বিবেক গাযার মযলূম শিশু ও নারীদের প্রতিরক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রিয় শিক্ষার্থী যুব সমাজ ! এটা হচ্ছে আপনাদের সাথে আমাদের সহমর্মিতা ও সংহতির বার্তা । আপনারা এখন ইতিহাসের সঠিক দিক ও পক্ষে অবস্থান করছেন ও দাঁড়িয়েছেন যার পৃষ্ঠা এখন উল্টে যাচ্ছে ( অর্থাৎ ইতিহাসে পরিবর্তন আসছে) ।
আপনারা এখন প্রতিরোধ ফ্রন্টেরই অংশ এবং আপনাদের সরকার যা প্রকাশ্যে জবরদখল কারী , দখলদার ও নির্দয় জায়নবাদী ইসরাইলের সাহায্য ও সমর্থনকারী সেই সরকারের নির্দয় চাপের মুখে ভদ্রজনোচিত সংগ্রাম শুরু করেছেন ।
মহান প্রতিরোধ ফ্রন্ট একটি দূরবর্তী স্থানে আপনাদের আজকের এই বোধ শক্তি , আবেগ ও অনুভূতি সহকারে বহু বছর যাবৎ সংগ্রাম করছে। এ সংগ্রামের লক্ষ্য হচ্ছে ঐ প্রকাশ্য অন্যায় অবিচারের অবসান যা জায়নবাদী শিরোনামের এক সন্ত্রাসবাদী নির্দয় নেটওয়ার্ককে পূর্ববর্তী বছরগুলো থেকে ফিলিস্তীনী জাতির ওপর চাপিয়ে দিয়েছে এবং তাদের দেশ ও মাতৃভূমি ( ফিলিস্তীন ) জবরদখলের পর তাদেরকে ( ফিলিস্তীনী জাতি ) সবচেয়ে কঠোর চাপ ও নির্যাতনের শিকার করেছে । জায়নবাদী অ্যাপারটাইড ইসরাইল সরকারের আজকের গণহত্যা ( গাযায়) দশকের পর দশক ধরে চালানো তীব্র অন্যায় মূলক আচরণেরই ধারাবাহিকতা স্বরূপ।
মুসলমান , খ্রীষ্টান ও ইহুদীদের নিয়ে গঠিত (ফিলিস্তীনী ) জাতি সহ ফিলিস্তীন হচ্ছে একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র ভূখণ্ড ও দেশ যার সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক অতীত রয়েছে। বিশ্বযুদ্ধের পর জায়নবাদী নেটওয়ার্কের পূঁজিবাদীরা ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতায় কয়েক হাজার সন্ত্রাসীকে ধীরে ধীরে এ ভূখন্ডে অনুপ্রবেশ করায় ; তারা ফিলিস্তীনের শহর ও গ্রাম সমূহে হামলা চালিয়ে কয়েক দশ সহস্র ফিলিস্তীনীকে হত্যা করে অথবা প্রতিবেশী দেশ সমূহে তাড়িয়ে দেয় ; ঘরবাড়ি, বাজার ( ব্যবসায় বাণিজ্য কেন্দ্র ) ও কৃষি জমি ও ক্ষেতখামার সমূহ ফিলিস্তীনীদের থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং ফিলিস্তীনের দখলকৃত ভূখণ্ডে ইসরাইল নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ।
ব্রিটেনের প্রাথমিক সাহায্য সমূহের পর জবরদখলকারী দখলদার এই জায়নবাদী সরকারের সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা এই জায়নবাদী সরকারকে রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য দেওয়া অব্যাহত রেখেছে এবং এমনকি অমার্জনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য অসতর্কতা ও অসাবধানতা বশতঃ ( অর্থাৎ বেপরোয়া ভাবে) এই ( দখলদার ইসরাইল ) সরকারের সম্মুখে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের পথ উন্মুক্ত করেছে এবং এ পথে ইসরাইলকে সাহায্য করেছে।
জায়নবাদী ইসরাইল সরকার প্রথম দিন থেকেই ফিলিস্তীনের নিরীহ অসহায় জনগণের সম্মুখে লৌহ মুষ্ঠী নীতি অবলম্বন করেছে। বিবেক বুদ্ধি প্রসূত , মানবিক ও ধর্মীয় নীতি - মূল্যবোধ সমূহের প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতা দিন দিন নির্মমতা , নিষ্ঠুরতা , সন্ত্রাস ও দমননীতির মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও তার সকল শরীক এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ ও নিরবচ্ছিন্ন অন্যায় অত্যাচারের ( যুলুম) মোকাবেলায় এমনকি সামান্য ভ্রুকুটি করা থেকেও বিরত থেকেছে। আজও গাযায় লোমহর্ষক ভয়ানক অপরাধের বরাবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য সমূহ যতখানি প্রকৃত বাস্তব তার চেয়েও সেগুলো অধিক ভণ্ডামিপূর্ণ ।
প্রতিরোধ ফ্রন্ট অন্ধকার ও হতাশাব্যঞ্জক পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভিতর হতে উদিত ও মাথা উঁচু করে বের হয়ে আসে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এই প্রতিরোধ ফ্রন্টকে বিস্তৃত ও শক্তিশালী করেছে।
আন্তর্জাতিক জায়নবাদের নেতারা যাদের মালিকানাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ সংবাদ কর্পোরেশন / কর্পোরেট সংবাদ মাধ্যম অথবা তাদের অর্থ ও উৎকোচের প্রভাবাধীন তারা ( ফিলিস্তীনীদের ) মানবীয় ও সাহসিকতাপূর্ণ এই
প্রতিরোধ সংগ্রামকে সন্ত্রাসবাদ বলে অভিহিত করে । যে জাতি নিজ দেশে জায়নবাদী দখলদারদের অপরাধ সমূহের বরাবরে আত্মরক্ষা করছে সেই জাতি কি সন্ত্রাসবাদী ? আর এই জাতিকে মানবীয় ত্রাণ সাহায্য দেওয়া এবং তাদের বাহুকে শক্তিশালী করা কি সন্ত্রাসবাদ বলে গণ্য হতে পারে ? !
হিংস্র (ও বিদ্বেষী) বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের অধিপতি ও নেতৃবর্গ এমনকি মানবীয় মূল্যবোধ , ধারণা ও তাৎপর্য সমূহের প্রতিও একটু দয়াও প্রদর্শন করে না । সন্ত্রাসী ও নির্দয় - নিষ্ঠুর ইসরাইল সরকারকে তারা আত্মরক্ষাকারী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে এবং ফিলিস্তীনী প্রতিরোধ আন্দোলন যারা নিজ স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং নিজ ভাগ্য নির্ধারণের ( বৈধ ও ন্যায্য) অধিকার সংরক্ষণের সংগ্রাম করছে তাদেরকে তারা ( অর্থাৎ ঐ সব নেতৃবর্গ ) সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে ।
আমি আপনাদেরকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে চাচ্ছি যে আজ অবস্থা ও পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। ভিন্ন এক নিয়তি ও ভাগ্য সংবেদনশীল পশ্চিম এশিয়ার জন্য অপেক্ষমান। বৈশ্বিক পরিসরে বহু অগণিত বিবেক জাগ্রত হয়ে গেছে এবং প্রকৃত বাস্তবতা স্পষ্ট ও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। প্রতিরোধ ফ্রন্টও শক্তিশালী হয়েছে এবং আরো অধিক শক্তিশালী হবে । ইতিহাসের পাতাও উল্টে যাচ্ছে।
আপনারা যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারা ব্যতীত বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ এবং জনগণ উঠে ও রুখে দাঁড়িয়েছে ( জাগ্রত হয়েছে)। আপনাদের অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষকদের সমর্থন ও (আপনাদের সাথে ) তাদের সহযোগিতা নি: সন্দেহে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাব বিস্তারকারী ঘটনা । এটা সরকারের পুলিশী তৎপরতার তীব্রতা এবং যে সব চাপ আপনাদের ওপর আরোপ করা হচ্ছে সেগুলোর বরাবরে বেশ খানিকটা স্বস্তিদায়কও হতে পারে। হে তরুণ যুবক সম্প্রদায়! আমিও আপনাদের সাথে সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ এবং আপনাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম ও দৃঢ়চিত্ততার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করছি ।
আমাদের অর্থাৎ মুসলমানদের প্রতি এবং সকল বিশ্ববাসীর প্রতি পবিত্র কুরআনের শিক্ষা হচ্ছে সত্যের পথে দাঁড়ানো ( এবং দৃঢ়পদতা ) । পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে : যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন ঠিক সেভাবে আপনি দৃঢ়পদ ও অটল থাকুন ।
فَاسْتَقِمْ کَمَا أُمِرْتَ
আর মানবজাতির মাঝে পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা হচ্ছে এই যে তোমরা না অন্যায় ও অত্যাচার ( যুলুম) করবে আর না তোমরা অত্যাচারিত হবে ।
لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ
প্রতিরোধ (সংগ্রামের ) ফ্রন্ট এ সব নির্দেশ এবং এগুলোর মতো শত শত বিষয়ের শিক্ষা নিয়ে এবং এগুলো অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন এবং মহান আল্লাহর অনুমতি ক্রমে তারা ( প্রতিরোধ সংগ্রামীরা ) বিজয়ী ও সফল হবেন।
আপনাদেরকে পবিত্র কুরআনের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী
৫-৩-১৪০৩ ( মোতাবেক: ২৫-৫-২০২৪ )