হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের বোলুচিস্তানে পুলিশ স্টেশন, রেলওয়ে লাইন ও গাড়িতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সমৃদ্ধশালী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশটিতে কয়েক বছরের মধ্যে এটিই বিদ্রোহীদের চালানো সবচেয়ে বড় হামলা। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানায়, রোববার রাতে ৩০ থেকে ৪০ জন বন্দুকধারী অন্তত ২২টি বাস, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয় তল্লাশি করেন এবং খুঁজে খুঁজে পাঞ্জাব থেকে আসা ব্যক্তিদের গুলি করে হত্যা করে। সেখানে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়, যাদের প্রায় সবাই পাঞ্জাব থেকে আসা শ্রমিক। এ ছাড়া বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে কালাত জেলায় বন্দুকধারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ জনকে হত্যা করে। বোলান জেলায় রোববার রাতে হত্যা করা হয় ছয়জনকে, যাদের চারজন পাঞ্জাব থেকে আসা। আরও কয়েকটি হামলায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ৫ সদস্যসহ ১৪ জনকে হত্যা করা হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ হামলার দায় স্বীকার করেছে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। গোষ্ঠীটি এ সন্ত্রাসী হামলার নাম দিয়েছে ‘হারুফ’ বা ‘অন্ধকার ঝড়’। এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, গত কয়েকদিনে আরও হামলা হয়েছে, যা এখনো নিশ্চিত করেনি সরকার।
গোষ্ঠীটি জানায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর জেলা গোয়াদারের আধাসামরিক ঘাঁটিতে হামলায় এক নারীসহ ৪ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী জড়িত ছিল। পাকিস্তানি সরকার আত্মঘাতী বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘাঁটিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, একটি প্রধান মহাসড়কে বাস ও ট্রাক লক্ষ্য করে চালানো সবচেয়ে বড় হামলায় ১৪ সেনা ও পুলিশ এবং ২১ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী জানান, হামলায় ৩৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লোকজনকে বাস থেকে নামিয়ে পরিবারের সামনে হত্যা করা হয়েছে।’
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পাকিস্তানে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য এই হামলা একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা।’
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত বেশ কয়েকটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে বালুচ লিবারেশন আর্মি সবচেয়ে বড়। তাদের দাবি, প্রদেশের গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অন্যায়ভাবে শোষণ করা হচ্ছে, যেখানে দারিদ্র্য বেড়েছে। তারা চায় চীনকে বিতাড়িত করে বালুচিস্তানের স্বাধীন করা হোক। সোমবার ছিল বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা আকবর বুগতির মৃত্যুবার্ষিকী, যিনি ২০০৬ সালে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন।