হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আরবাইন হুসাইন সম্পর্কে হাওজা নিউজ বাংলাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ আবিদ। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও উপস্থাপনায়: রাসেল আহমেদ রিজভী।
পরিচয়পর্ব:
আসসালামু আলাইকুম। আমি মোহাম্মদ আবিদ। আমার বাড়ী চট্রগ্রাম, বাংলাদেশ। প্রায় দেড় বছর ধরে আমি ইরানে পড়াশুনা করছি এবং আল্লাহ রব্বুল আলামিনের রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ২য় বারের মত কারবালায় আসার তৌফিক হয়েছে।
প্রশ্ন: এত যানবাহন থাকা সত্ত্বেও কেন এই সূর্যের তীব্র তাপ ও গরমের মধ্যে নাজাফ থেকে পায়ে হেঁটে কারবালায় এলেন? পায়ে হেঁটে কারবালায় আসার ফযিলত কি? কেন নিজেকে এই অসহনীয় কষ্টে ফেললেন?
পায়ে হেটে কারবালা যাওয়ার ফযিলত অনেক রয়েছে, সাওয়াবও অনেক রয়েছে, যেমন একটি হাদীসে ইমাম জাফর সাদেক(আ.) থেকে বর্ণিত, কেউ ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারতের উদ্দেশ্য যদি বের হয় তার প্রতিটি কদমে একটি করে নেকি লেখা হবে ও একটি করে গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আরও অনেক হাদীস রয়েছে এই পায়েহেটে যিয়ারত করার। কিন্তু, আমি কখনই সাওয়াবের উদ্দেশ্যে অথবা সাওয়াব পাওয়ার জন্য যিয়ারতে ইমাম হুসাইন (আ.) এ যাইনি। সাওয়াব পাওয়ার উপাই মহান রব্বিল আলামিন আমাদের জীবনে অনেক দিয়েছেন, প্রতিটা কদমে কদমে বান্দা নেকি অর্জন করতে পারে। আমি কারবালায় পায়ে হেটে গিয়েছি ইমাম হুসাইন (আ.) এর মুহাব্বতে এবং আমার বিশ্বাস এটি শুধু আমি না সকলেই ইমাম হুসাইন (আ.) এর মুহাব্বতে পায়ে হেটে ইমাম হুসাইন (আ.) পর্যন্ত যায়। মুহাব্বতের পাশাপাশি আরো কিছু কারণ রয়েছে যার জন্য আমি পায়ে হেটে যাই, তা হল- আমি পায়ে হেটে হুসাইনিয়াত এর পক্ষে ও ইয়াজিদিয়াত (আমেরিকা ও ইসরায়েল) এর বিপক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছি। যদিও শিয়া মুসলিম এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এই যিয়ারতের অনুষ্ঠানে কিন্তু শুধু শিয়া নয় এইখানে সুন্নি, হিন্দু ইত্যাদি মাযহাবে ও ধর্মের মানুষরাও অংশগ্রহণ করে। এই পায়ে হেটে যিয়ারতের মাধ্যমে আমি অনেক কিছু অনুভব করি, এক এক মানু্ষের এক এক ধরনের ভালোবাসা প্রকাশ ইমাম হুসাইন (আ.) এর প্রতি কোরআনও বলছে দুনিয়াকে ঘুরে দেখার জন্য তাই আমিও দেখছি ১৪০০বছর আগে একজন ব্যক্তিকে (ইমাম হুসাইন আ.) পিপাসিতভাবে জালিমের পক্ষের লোক হত্যা করেছিল শুধুমাত্র ৭২ জন নিয়ে ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত অবস্থায় ইসলামের জন্য যে ব্যক্তি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, আজকে সেই ইমাম হুসাইন (আ.) এর মুহাব্বতে কেউ পানি পান করাচ্ছে, কেউ খাওয়ার খাওয়াচ্ছে ও কেউ সেবা করছেন।
প্রশ্ন: আমাদের লক্ষ্যই যদি যিয়ারত হয়, তাহলে আমরা কেন ৩ দিন হেঁটে কাটিয়ে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আরও বেশি সময় ধরে যিয়ারত করা থেকে বঞ্চিত হব?
এই পায়ে হাটার সফরটিতে আমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই, এইখানে সকলে তাগুতকে অমান্য করে এক আল্লাহর অভিভাবকত্বকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এইখানে সকলে এক হয়ে হুসাইন এর দিকে আগাচ্ছে যে হুসাইন (আ.) আল্লাহর দিকে আহবান করছেন। এই পায়ে হাটার সফরে আল্লাহর বান্দেগী রয়েছে, আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইসলামে সকল জিনিস সামাজিকভাবে এক হয়ে করার জন্য বলেছেন যেমন নামায, হজ্ব, রোযা সকলের জন্য ১টিমাসেই ফরয করেছে এমনভাবে ইসলামের সকল জিনিস মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক আল্লাহর দিকে যাওয়ার আহবান করছে, তাই এই পায়ে হেটে ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারতেও আমরা জালিমকে না বলে হুসাইনিয়াত অর্থ্যাৎ আল্লাহর দিকে এগিয়েছি এবং যাবো ইন শা আল্লাহ।
প্রশ্ন: এই সফরে এসে আপনার অনূভুতি কী?
এই সফর আমাকে ও আমার কলবকে পবিত্র করে আমার আধ্যাত্মিকতার স্থরকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এক কথায় যদি বলি, পায়ে হেটে এই সফর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সফর যেখানে রয়েছে সংগ্রামি, আধ্যাত্মিক ও প্রেমিক হওয়ার সুযোগ যা মানুষকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়।
প্রশ্ন: ২০২৩ সালে কারবালায় যিয়ারতকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ, এই বছর ইরাকে অসহনীয় তীব্র গরম ও তাপদাহের পরও ২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি। তথ্যমতে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম সমাবেশ, তারপরও কেন মুসলিম উম্নাহ্ ও বিশ্ব মিডিয়ায় তেমন প্রচার নেই? এর পেছনে করাণ কী হতে পারে?
কারবালায় পায়ে হেটে যাওয়া মুসলমানদের জাগ্রত হওয়ার ও জুলুম এর বিরুদ্ধে তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক বহন করছে। আর যেহেতু বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইয়াজিদ ও জালেম হলো আমেরিকা ও দখলদার ইসরায়েল এবং বিশ্ব মিডিয়াও তাদের হাতেই সুতরাং এমন কাজ যেটা তাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে সেটা বিশ্ব মিডিয়াতে তারা আনবে না- এইটাই স্বাভাবিক।