۲۶ آذر ۱۴۰۳ |۱۴ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 16, 2024
সুন্নী সমাজে শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে ৬টি মিথ্যা অভিযোগ
রাজধানী তেহরানে ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে আগত সারা বিশ্ব থেকে আগত সুন্নি আলেম-ওলামাদের সঙ্গে আন্তরিক কুশাল বিনিময় করছেন সর্বোচ্চ নেতা

হাওজা / ইতিহাস জুড়ে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে কিছু ধর্মীয় মত পার্থক্য সুন্নিদের মধ্যে শিয়া বিশ্বাস সম্পর্কে মিথ্যা ব্যাখ্যা এবং মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামে রাসূল (সা)'র আহলে বাইতপন্থি শিয়াদের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ করে থাকেন। যদিও শিয়ারা ইসলামের মৌলিক নীতি যেমন তাওহিদ বা একেশ্বরবাদ, নবুওয়াত এবং পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে থাকেন।

ইতিহাস জুড়ে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে কিছু ধর্মীয় মত পার্থক্য সুন্নিদের মধ্যে শিয়া বিশ্বাস সম্পর্কে মিথ্যা ব্যাখ্যা এবং মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে। ইতিহাসের এই ভুল বোঝাবুঝি এবং মিথ্যাগুলো প্রধানত চরমপন্থী গোষ্ঠীর মাধ্যমে উত্থাপিত হয়েছিল এবং এগুলো সুন্নীদের সাধারণ মনোভাবকে প্রতিফলিত করে না। বর্তমান দুই শতাব্দীতে এবং বিশেষ করে মিডিয়ার ক্ষমতায়নের যুগে ঔপনিবেশিকতা এতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এবং অনেক গুজব ছড়িয়ে সুন্নি সমাজে শিয়াদের প্রতি ঘৃণার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। তাকফিরি স্রোতের উত্থানের সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পায়। আজকেরর নিবন্ধে শিয়া মুসমিমদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সবচেয়ে বড় মিথ্যা ও অভিযোগের মধ্যে ছয়টি আলোচনা করা হয়েছে:

১. কোরআনের বিকৃতি: শিয়াদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর একটি হলো কোরআনের বিকৃতিতে বিশ্বাস করা। এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা; সুন্নিদের মতো, শিয়ারাও বিদ্যমান কোরানকে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আল্লাহর বাণী বলে মনে করে এবং তা মেনে চলে। কোরআনকে বিকৃত করার ধারণা শিয়াদের মধ্যে কোন স্থান নেই এবং খাঁটি শিয়া বইগুলো এই বিষয়ে জোর দিয়ে আসছে। ইরানে সব মানুষের হাতে এবং মসজিদে হুবহু একই কুরআন রয়েছে যা সৌদি আরব, মিশর, ইন্দোনেশিয়া এবং আলজেরিয়ার মানুষের হাতে রয়েছে। এমনকি অনেক কুরআনের বই সুন্নি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এমনকি একটি শব্দও আলাদা নয়,একটি অক্ষরও নয়!

২. ইমামদের সম্পর্কে বাড়াবাড়ি: শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরো গুরুতর অভিযোগ করা হয় যে তারা নবীর পরিবার সম্পর্কে বিশেষ করে ইমাম আলী (আ.) এবং নবীর আহলে বাইতের অন্যান্য ইমামদের সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে এবং তাদেরকে ঐশী শক্তির অধিকারী বলে মনে করে। "বেলায়েত' ধারণা এবং শিয়া বিশ্বাসে ইমামদের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবের কারণে এই ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম হচ্ছেন রাসূল (সা)'র উত্তরাধিকারী পথপ্রদর্শক ও তারঁ মাধ্যমে নাজিল হওয়া আল্লাহর অহীর ব্যাখ্যা করার একটি মাধ্যম। সূরা আল-আহজাবের ৩৩ নং আয়াত অনুসারে আহলে বাইতের ইমামগণ নিষ্পাপ এবং পরিশুদ্ব মানুষ। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, (হে) আহলে বাইত! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পুর্ন রুপে পুতঃপবিত্র রাখতে। কিন্তু শিয়া মুসলমানরা কখনই তাদেরকে ঐশী শক্তি হিসেবে এবাদত বন্দেগী করে না। এই মিথ্যা শিয়ারা একেবারেই বিশ্বাস করে না। ইমামগণ ইসলামের নবীর সমস্ত হাদীস বর্ণনা করেন।

৩. ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতা: কিছু চরমপন্থী শিয়াদের বিরুদ্ধে ইসলামে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছে। যদিও শিয়ারা তাওহিদ বা একেশ্বরবাদ, নবুওয়াত এবং পুনরুত্থানের মতো ইসলামের মৌলিক নীতিতে বিশ্বাস করে এবং কেবলমাত্র কিছু শরীয়ত এবং আইনগত বিষয়ে সুন্নিদের সঙ্গে একমত নয়। এই আইনশাস্ত্রগত মতপার্থক্য শিয়া পণ্ডিতদের ইজতিহাদের ভিত্তিতে এবং এর অর্থ ধর্মে নতুনত্ব যোগ করা নয়।

৪. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে চাওয়া: শিয়া ধর্মে আবেদনের অর্থ হল ইসলামের নবী (সা.), অভ্রান্ত ইমাম (সা.) এবং ধার্মিক ও নেক ব্যক্তিদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উসিলা বা সুপারিশ করা। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে আহলে বাইতকে অবলম্বন করার অর্থ তাদেরকে ইবাদত করা নয় বরং যারা আল্লাহর নিকটবর্তী তাদের কাছ থেকে সুপারিশ এবং প্রার্থনা চাওয়া। এই বিশ্বাসের মূল রয়েছে কোরআন যেখানে আল্লাহ বলেছেন, "হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং উপায় সন্ধান কর" (সূরা মায়িদা, আয়াত ৩৫), অর্থাৎ "হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান কর।" এছাড়াও কোরআনে হযরত ইয়াকুবের সন্তানদের তাদের পিতার কাছে আবেদনের কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে তারা ইয়াকুব (আ.)-কে তাদের পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলে "বলো, আমার পিতা, আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের পাপ, আমরা পাপী" (সূরা ইউসুফ, আয়াত- ৯৭)। এই উদাহরণগুলো দেখায় যে তাওয়াসল শুধুমাত্র শিয়া ঐতিহ্যেই নয়,পবিত্র গ্রন্থ এবং নবীদের ইতিহাসেও একটি বৈধ স্থান রয়েছে এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম।

৫. নবীর সাহাবীদের শত্রুতা এবং অপমান: শিয়াদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সাধারণ অভিযোগের মধ্যে একটি হল তারা নবী (সা.)-এর সাহাবীদের শত্রু মনে করে এবং তাদের অসম্মান করে। এই মিথ্যাও একটি ইচ্ছাকৃত অভিযোগ। প্রকৃতপক্ষে শিয়া মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে নবীর পরে সাহাবীদের মধ্যে দুটি সাধারণ শ্রেণী পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে একদল যারা সম্পূর্ণ অনুগত ছিল এবং অন্য দল যারা নিজেরাই কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শিয়ারা দ্বিতীয় শ্রেণীর কিছু আচরণের সমালোচনা করে, কিন্তু শিয়া পণ্ডিতরা যেমন ইমাম খোমেনি এবং ইমাম খামেনির মতো পুরানো থেকে নতুন পর্যন্ত, বলেছেন যে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোন অপমান করা নিষিদ্ধ। সকল শিয়া তাকলীদ কর্তৃপক্ষ ও শিয়া আলেমদের দৃষ্টিকোণ থেকে সাহাবায়ে কেরামকে অপমান করা জায়েজ নয়।

৬. নবী (সা.) এর স্ত্রীদের অপমান: আরেকটি মিথ্যা এবং সাধারণ অভিযোগ করা হয় যে শিয়ারা নবীর স্ত্রীদের অসম্মান করে এবং তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়। যদিও শিয়ারা নবীর স্ত্রীদের অবস্থানকে সম্মান করে এবং কখনও তাদের বিশ্বাসের মধ্যে এই ধরনের অপবাদ অন্তর্ভুক্ত করে না। কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার ব্যাখ্যায় পার্থক্যের অর্থ কখনই শিয়া বিশ্বাসে নবীর নারীদের চরিত্র ও অবস্থানকে অসম্মান করা নয়। সকল শিয়াদের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং কুরআনের ভিত্তিতে নবীর স্ত্রীরা হলেন "উম্মুল মুমিনীন"।

সূত্র: পার্সটুডে

تبصرہ ارسال

You are replying to: .