হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী ইতিহাসে যে ক'জন মহীয়সী নারীকে আদর্শ হিসেবে পরিগণিত করা হয়, হযরত ফাতিমা (সা.আ.) তাদের মধ্যে অন্যতম! আহলে বাইতের (আ.) অন্যতম প্রধান সদস্য ও জান্নাতি নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর শান, মান ও মর্যাদা সম্পর্কে শিয়া-সুন্নি উভয় মাজহাবের হাদীস গ্রন্থসমূহে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হযরত ফাতিমা (সা.আ.) সম্পর্কে সেই অসংখ্য হাদীস হতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সূত্রে আমরাও কেবল রাসুলুল্লাহ (সা.)’র পবিত্র জবান নিসৃত ৪০টি হাদীস ধারাবাহিকভাবে চার পর্বে উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহ।
১ম পর্বের ১০টি হাদীস নিম্নরূপ:
১. রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন,
"إذا كانَ یَوْمُ القیامَةِ نادى مُنادٍ: یا أَهْلَ الجَمْعِ غُضُّوا أَبْصارَكُمْ حَتى تَمُرَّ فاطِمَة."
অর্থ: কিয়ামতের দিন একজন আহবানকারী উচ্চ স্বরে সবাইকে আহবান করবেন, “হে জনতা! হযরত ফাতিমা (সা.আ.)তোমাদের অতিক্রম করে চলে যাওয়া পর্যন্ত নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখো।”
[কানযুল উম্মাল, খন্ড-১৩, পৃষ্ঠা- ৯১-৯৩; মুন্তাখাবুল কানযুল উম্মাল বাহামিশুল মুসনাদ, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৯৬; আস্ সাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ, পৃষ্ঠা-১৯০; আসাদুল গাবাহ, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৫২৩; তাযকিরাতুল খাওয়াছ, পৃষ্ঠা- ২৭৯; যাখায়িরুল উকবা, পৃষ্ঠা- ৪৮; মানাকিবুল ইমাম আলী ইবনুল মাগাযেলী, পৃষ্ঠা- ৩৫৬; নূরুল আবছার, পৃষ্ঠা- ৫১-৫২; ইয়া নাবিয়্যুল মাওয়াদ্দাহ, খন্ড- ২, অধ্যায়- ৫৬, পৃষ্ঠা- ১৩৬]
২. রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন,
"كُنْتُ إذا اشْتَقْتُ إِلى رائِحَةِ الجنَّةِ شَمَمْتُ رَقَبَةَ فاطِمَة."
অর্থ: "আমি যখন বেহেশতের সুবাস নিতে ইচ্ছাপোষণ করতাম, তখন আমি ফাতিমা’র সুবাস নিতাম।" [অর্থাৎ হযরত ফাতিমা (সা.আ.) বেহেশতি সুবাসে সুবাসিত ছিলেন!]
[মুন্তাখাব কানযুল উম্মাল, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা- ৯৭; নূরুল আবছার, পৃষ্ঠা- ৫১; মানাকিবুল ইমাম আলী ইবনে মাগাযেলী, পৃষ্ঠা- ৩৬০]
৩. রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো এরশাদ করেন,
"حَسْبُك مِنْ نساءِ العالَمِین أَرْبَع: مَرْیمَ وَآسیَة وَخَدیجَة وَفاطِمَة."
অর্থ: “পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ চার জন নারী হলেন-মরিয়ম, আছিয়া, খাদিজা ও ফাতিমা (সা.আ.)!”
[মুস্তাদরাক আস-সাহিহাইন, খণ্ড- ৩, অধ্যায়-মানাকিব্ ফাতিমা, পৃষ্ঠা- ১৭১; সেইর আ'লাম আল-নুবলা, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ১২৬; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ৫৯; মানাকিবুল ইমাম আলী- ইবনে মাগাযেলী, পৃষ্ঠা- ৩৬৩]
৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরো এরশাদ করেন,
"یا عَلِی هذا جبریلُ یُخْبِرنِی أَنَّ اللّهَ زَوَّجَك فاطِمَة."
অর্থ: “হে আলী! জিবরাঈল এখন আমাকে জানালেন যে, আল্লাহ ফাতিমাকে তোমার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন (অর্থাৎ বিয়ে ধার্য করেছেন)।”
[রিয়াদ আল নাদরা: ইমাম আলীর (আ.) গুণাবলী অধ্যায়, পৃষ্ঠা- ১৪১]
৫. রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন,
"ما رَضِیْتُ حَتّى رَضِیَتْ فاطِمَة."
অর্থ: “আমি কোনো কিছুতেই সন্তুষ্ট হই না, যতক্ষণ না তা ফাতিমাকে সন্তুষ্ট করে।”
[মানাকিবুল ইমাম আলী- ইবনে মাগাযেলী, পৃষ্ঠা- ৩৪২]
৬. রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো এরশাদ করেন,
"یا عَلِیّ إِنَّ اللّهَ أَمَرَنِی أَنْ أُزَوِّجَكَ فاطِمَة."
অর্থ: “হে আলী! মহান আল্লাহ আমাকে ফাতিমার সাথে তোমার বিবাহ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।”
[আস্ সাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ, অধ্যায়- ১১, পৃষ্ঠা- ১৪২; যাখায়িরুল উকবা, পৃষ্ঠা- ৩০-৩১; তাযকিরাতুল খাওয়াছ, পৃষ্ঠা- ২৭৬; রিয়াদ আল নাদরা: ইমাম আলীর (আ.) গুণাবলী অধ্যায়, পৃষ্ঠা- ১৪১; নূরুল আবছার, পৃষ্ঠা- ৫৩]
৭. রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরো এরশাদ করেন,
"إِنّ اللّهَ زَوَّجَ عَلیّاً مِنْ فاطِمَة."
অর্থ: “নিশ্চয় স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা আলী ও ফাতিমার বিবাহ সম্পন্ন করেছেন!”
[আস্ সাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ, পৃষ্ঠা- ১৭৩]
৮. রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন,
"أَحَبُّ أَهْلِی إِلیَّ فاطِمَة."
অর্থ: “আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে ফাতিমা আমার সবচেয়ে প্রিয়ভাজন।”
[জামিউস ছাগীর, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ৩৭, হাদীস- ২০৩; আস্ সাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ, পৃষ্ঠা- ১৯১; ইয়া নাবিয়্যুল মাওয়াদ্দাহ, খন্ড- ২, অধ্যায়- ৫৯, পৃষ্ঠা- ৪৭৯; কানযুল উম্মাল, খন্ড- ১৩, পৃষ্ঠা- ৯৩]
৯. রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো এরশাদ করেন,
"خَیْرُ نِساءِ العالَمین أَرْبَع: مَرْیَم وَآسیة وَخَدِیجَة وَفاطِمَة."
অর্থ: বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চার নারী হলেন: মরিয়ম, আসিয়া, খাদিজা ও ফাতিমা।
[জামিউস ছাগীর, খন্ড- ১, হাদীস- ৪১১২, পৃষ্ঠা- ৪৬৯; আল-ইসবাহ ফি তামিয আস-সাহাবা, খন্ড- ৪, পৃষ্ঠা- ৩৭৮; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৬০; যাখায়িরুল উকবা, পৃষ্ঠা- ৪৪]
১০. রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন,
"سیّدَةُ نِساءِ أَهْلِ الجَنَّةِ فاطِمَة."
অর্থ: “ফাতিমা, জান্নাতের নারীদের রাণী/নেত্রী!”
[ কানযুল উম্মাল, খন্ড- ১৩, পৃষ্ঠা- ৯৪; সহীহ্ আল-বুখারী, অধ্যায়-কিতাবে ফাজায়েল (মানাকিব্ ফাতিমা); আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ৬১]
চলবে....
হাওজা নিউজ / অনুবাদ ও সংকলন: রাসেল আহমেদ রিজভী