۲۲ آذر ۱۴۰۳ |۱۰ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 12, 2024
পশ্চিম বাংলায় বাংলা ভাষার দুর্দিন
পশ্চিম বাংলায় বাংলা ভাষার দুর্দিন

হাওজা / হায় হায় ! ভারতের পশ্চিম বাংলা কি পাকিস্তান হয়ে গেল ? সেখানে হিন্দি ও উর্দুতে পুলিশের এসআই (SI) পরীক্ষা দেওয়া যাবে।

রিপোর্ট: হাসান মুরাদ

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হায় হায় ! ভারতের পশ্চিম বাংলা কি পাকিস্তান হয়ে গেল ? সেখানে হিন্দি ও উর্দুতে পুলিশের এসআই (SI) পরীক্ষা দেওয়া যাবে ।

পশ্চিম বাংলায় এ পরীক্ষার জন্য বাংলা বাধ্যতামূলক নয় ! কী সাংঘাতিক কথা ? ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ৭৫ বছর পরেও হিন্দু প্রধান পশ্চিম বাংলায় উর্দু ভাষার দৌরাত্ম ? পশ্চিম বাংলায় বাংলা ভাষা প্রেমিক ও সৈনিকরা আজ কোথায় ? সল্ট লেকে পুলিশের এসআই নিয়োগের পরীক্ষায় বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করার জন্য বাংলা পক্ষ প্রতিবাদ মিছিল বের করে বুধবারে । অথচ পূর্ব বাংলার ( পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ ) দামাল সন্তানরা রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবিতে জীবন উৎসর্গ পর্যন্ত করেছে । কিন্তু আজ হিন্দি-উর্দূ-ইংরেজীর দৌরাত্ম কালে কোথায় ক্যালকাটার বাঙালি দাদা বাবুরা ? তারা চুপচাপ কেন ৭৫ বছর ধরে ? ৭৫ বছর পর ঠুনকো লোকদেখানো প্রতিবাদ মিছিল যার কোনো কার্যকর প্রভাব আছে কিনা সন্দেহ !!! কারণ বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী এখন তো পশ্চিম বঙ্গে (বাঙ্গালীদের কাছেই ) বাংলা ভাষা নিয়ে গরব নাই আশাও নাই ( অর্থাৎ হায় কি যে দুর্ভাগ্য ! পশ্চিম বঙ্গে বাংলা ভাষা নিয়ে আশা না থাকার অর্থই হচ্ছে সেখানে (পশ্চিম বঙ্গে ) বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎও নেই । কলকাতার তথাকথিত বাঙ্গালিপনা ও বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধ্বজাধারী সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশবাদী ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত ও আশ্রয় গ্রহিতা দাদা বাবু শ্রেণীর বংশধর নতুন প্রজন্ম বাংলার বদলে ইংরেজি ও হিন্দি নয়তো এই দুই ভাষা মিশিয়ে হিংলিশ নামের এক জগাখিচুড়ী অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে !!! তাহলে পূর্ব বাংলা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত দেশাত্মবোধক সংগীত ( যা ২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলাদেশে বাজতে থাকে তা অর্থাৎ " মোদের গোরব মোদের আশা আমারি বাংলা ভাষা" এ সংগীতের তাহলে কোনো ভূমিকা ও মূল্যই নেই পশ্চিম বঙ্গে ? !!!!

বা "ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা লইতে চায় ! " -- ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত এ সংগীত কি পশ্চিম বাংলার কলকাত্তীয় হিংলিশ ( হিংরেজী ) বা হিন্দি ও ইংরেজি ভাষাভাষী নতুন প্রজন্মের কাছে আবেদন রাখতে পারবে ? পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ও কর্তৃপক্ষ পূর্ববাংলা বা পূর্বপাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশের জনগণের মুখের ভাষা ও বুলি কাইরা লইতে পারে নাই । শুধু তাই নয় ৭৫ বছর ধরে উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের প্রাদেশিক ও রাজ্য ভাষা গুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত করতে পারে নি । তাই পাকিস্তানের পাঞ্জাবী , সিন্ধী , বেলুচ , পোশতূন, কাশ্মীরী , গিলগিতী , বালতিস্তানী জাতি সত্ত্বা তাদের মাতৃভাষা ভুলে যায় নি বা তা বর্জন করে নি । এমনকি ভারতে হিন্দি রাষ্ট্র ভাষা

হওয়া সত্ত্বেও বাংগালী ব্যতীত অন্যান্য অহিন্দি ভাষাভাষী জাতি সত্ত্বা যেমন: পাঞ্জাবী , তামিল, তেলেগু , মারাঠী গুজরাটী , রাজপুত কাশ্মীরী , উড়িয়া প্রভৃতি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী কি তাদের মাতৃভাষা ভুলে গেছে বা তা তারা বর্জন করেছে ? তাহলে পশ্চিম বঙ্গের অধিবাসীদের কেন এ হীনতা- দীনতা? সেখানে কেন বাংলার গোরব নেই আশাও নেই? তাহলে ভারত সরকার পাকিস্তান সরকার বনে গেছে কি ? পশ্চিম বাংলা পাকিস্তান হয়ে গেছে? কারণ পাকিস্তানের প্রতীক উর্দু ভাষা । পশ্চিম বঙ্গে হিন্দির পাশাপাশি উর্দুও বহাল তবিয়তে প্রতিষ্ঠিত আছে যার প্রমাণ হচ্ছে হিন্দি - উর্দুতে পশ্চিম বঙ্গ পুলিশের এসআই পদের নিয়োগ পরীক্ষা !!!

অথচ বাংলাদেশে উর্দুর নাম শুনলে বিশেষ এক শ্রেণীর গাত্রদাহ ও মর্ম জ্বালা শুরু হয়ে যায় এবং তারা বলতে থাকে: এই বুঝি বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে গেল বা হয়ে যাচ্ছে !!! অথচ এরাই পশ্চিম বঙ্গ সম্পর্কে কী বলবে ? এরা কি জিগির তুলবে ও কান্নাকাটি করে বিলাপ করবে : হায় রে পোড়া কপাল ! রবি , নজরুল , বঙ্কিম , শরৎ , বিদ্যাসাগরের পূণ্য (জন্ম) ভূমি পশ্চিম বঙ্গ ফাঁকিস্তান হয়ে গেল রে ! সেখানে হিন্দি - উর্দুর সয়লাব বয়ে যাচ্ছে রে ! এখন কী করব রে ?! হায় দু:খ ! পশ্চিম বঙ্গে বাংলা নিয়ে গরব নাই, আশাও নাই কলকাতার নতুন প্রজন্ম বাংলার বদলে ইংরেজি ও হিন্দি নয়তো এ দুটি ভাষা মিশিয়ে হিংলিশে কথা বলে রে !

এরা কেন দু:খ ও বিলাপ করে না ? এরা কেন পশ্চিম বঙ্গ , বাংলা ভাষা ও পশ্চিম বঙ্গের বাঙ্গালীদেরকে হিন্দি - ইংরেজি - হিংলিশের অর্গল থেকে মুক্ত করার সংগ্রাম করে না ? ঠিক যেমন ভাবে তারা উর্দুর জোয়াল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পূর্ব বাংলায় সংগ্রাম করেছিল ঠিক তেমনি ! এপার বাংলা শুধু উর্দুর অর্গল থেকে মুক্তি পেলে চলবে ? ওপার বাংলাকে হিন্দি-উর্দু - হিংলিশের অর্গল থেকে মুক্ত করতে হবে না !

*****

বাংলাদেশের বাংগালী জাতীয়তাবাদীরা পশ্চিম বাংলায় গিয়ে বাংলা ভাষা বাচাঁনোর আন্দোলন করে দেখুক তো ভারত সরকার যে এদেরকে কেমন ঠ্যাঙ্গানী দেয় তা দেখা যাবে তখন !!!

ঠ্যাঙ্গানী খেয়ে এরা আর কোনো দিন বাংলা ভাষা বাচাঁনোর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করার সাহস করবে না। এরা পাকিস্তান সরকারের সাথে পেরে উঠেছিল । কিন্তু ভারতের সাথে এরা ঠিক পেরে উঠবে না ।

পাকিস্তান সরকার উর্দু রাষ্ট্র ভাষা করতে চাইলে এরা প্রতিবাদ ও বিরোধিতায় ফেটে পড়েছিল । কিন্তু ভারত সরকার এদের ওপর যে ভাষাই চাপাবে এমনকি উর্দু ভাষাও এরা টু শব্দটি পর্যন্ত করবে না । পশ্চিম বাংলার গোঁড়া হিন্দু বর্ণবাদী কলকাত্তীয়া দাদা বাবুরা এখন হিন্দু - উর্দুর প্রাধান্যের মুখে কুলুপ এঁটে চুপচাপ বসে রয়েছে । অথচ এরাই পাকিস্তানে রাষ্ট্র ভাষা বিতর্ক সেদিন ( ১৯৪৮ সাল) উস্কে দেয়ার নেপথ্যে ছিল। উল্লেখ্য যে ১৯৪৮ সালে করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু না বাংলা তা উত্থাপন করে রাষ্ট্রভাষা বিতর্কের সূচনা করেছিলেন সেই ব্যক্তিটি ছিলেন ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ।আজ কোথায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মতো লোক পশ্চিম বঙ্গে যিনি বাংলা ভাষা বিলুপ্তির এ ঘোর দুর্দিনে হিন্দি ইংরেজির আগ্রাসন মোকাবেলা করবেন ?! আজ কলকাতার বর্ণবাদী গোঁড়া হিন্দু দাদা বাবুদের ছেলেমেয়েরা হিন্দু হয়ে বাংলা ভুলে ও বাদ দিয়ে হিন্দি উর্দু ইংরেজিতে ( হিংলিশ উংলিশ ) কথা বলে কলকাতায় তখন কেন এসব হিন্দু দাদা বাবু বাঁগালী আঁতেলেকচুয়াল আঁতাল মাতাল হয়ে চুপ মেরে বসে রয়েছেন কিছু ই করছেন না যে এরফলে পশ্চিম বঙ্গে বাংলার ব্যাপারে কোনো আশাই নেই ?! মুসলিম প্রধান পূর্ব বাংলায় ( পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ) তো কলকাতার এই দাদা বাবুরা উস্কানি দিয়ে ও ইন্ধন জুগিয়ে উর্দু - বাংলা বিরোধ , দ্বন্দ্ব ও কূট তর্ক লাগিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নেই। আর তাদের থেকে এ ধরণের বিপরীত ধর্মী আচরণ সত্যি অদ্ভুত।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .