۲۲ آذر ۱۴۰۳ |۱۰ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 12, 2024
News ID: 396431
5 فروری 2024 - 18:18
বাংলা ভাষা সংক্রান্ত

হাওজা / আমাদের বাড়িতে সে সময় মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ নিয়ে এলেন বাবা। আমি আর জানু আপা খুব কষ্ট করে ডিকশনারি নিয়ে কঠিন শব্দের অর্থ বের করে পড়তাম। বাবাও আমাদের সঙ্গে যোগ দিতেন । এই স্মৃতিটা আমার খুব মনে পড়ে।

রিপোর্ট: মুহাম্মাদ আবদুর রহমান

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম পর্ব : " আমাদের বাড়িতে সে সময় মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ নিয়ে এলেন বাবা। আমি আর জানু আপা খুব কষ্ট করে ডিকশনারি নিয়ে কঠিন শব্দের অর্থ বের করে পড়তাম। বাবাও আমাদের সঙ্গে যোগ দিতেন । এই স্মৃতিটা আমার খুব মনে পড়ে। "

ভাই - বোন : জন্মসূতোয় গাঁথা

আহমাদ শামীম, সময়কাল, আনন্দ প্রতিদিন; প্রকাশ : ২২-৯-২০১৫ | ০০•০০

মন্তব্য :

প্রথম পর্ব:

কঠিন কঠিন দুর্বোধ্য অপ্রচলিত তৎসম ( সংস্কৃত ) শব্দ ব্যবহার করে মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো ঐ সময়ের ( অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগ থেকে গোটা ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতকের প্রথম ৪৭ বছর [১৯৪৭ সাল ] পর্যন্ত ইংরেজ শাসনামল ) ইংরেজি শিক্ষিত ও ইংরেজ সংস্কৃতি প্রভাবিত বঙ্গীয় লেখক , কবি ও সাহিত্যিকরা তাদের কাব্য ও সাহিত্য কর্ম রচনা করতেন । ফলে তখনকার বাংলার স্কুল পড়ুয়া ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রী ( শিশু কিশোর ) এবং স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত সাধারণ মানুষ যারা ছিলেন এ দেশের বাসিন্দাদের সিংহভাগ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ( ৯০%এরও অধিক) তারা এ সব কাব্য ও সাহিত্য ঠিক মত বুঝতে পারতেন না এ সব কঠিন কঠিন দুর্বোধ্য অপ্রচলিত তৎসম শব্দের বহুল ব্যবহারের জন্য । আজও যারা সাদামাটাভাবে ব্যাচেলর ( বিএসসি , বিএ , বিকম) ডিগ্রিধারী এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে দুর্বল হওয়ার জন্য এ সব সাহিত্য কর্ম ও গদ্য-পদ্য পড়ে ঠিক মতো বোঝেন না কিনা সন্দেহ ; আর সাধারণ স্বল্প শিক্ষিত -অশিক্ষিত মানুষের কথা না হয় বাদই দিলাম। ইংরেজ প্রভাবে ও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণের কারণেই ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা নব্য হিন্দু সাম্প্রদায়িক সংস্কৃত পণ্ডিত , লেখক ও কবি সাহিত্যিক শ্রেণী তাদের কাব্য ও সাহিত্য কর্মে তখনকার বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত আরবী - ফার্সী শব্দ ( যা তখনকার জনগণের কাছেও ছিল বোধগম্য সেগুলো) বাদ দিয়ে ইংরেজদের উৎসাহ , পৃষ্ঠপোষণা ও নির্দেশে অপ্রচলিত বা স্বল্প প্রচলিত কঠিন কঠিন ও দুর্বোধ্য তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের বহুল প্রয়োগ করতে থাকলে ভাষায় এক ধরণের জটিলতা ও কৃত্রিমতা এবং দুর্বোধ্যতা ও অবোধগম্যতার সমস্যার উদ্ভব হয় যা উপরে আহমাদ শামীম প্রণীত ভাই -বোন : জন্মসূতোয় গাঁথা নামক এ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া

প্যারায় স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে : (( " আমি আর জানু আপা খুব কষ্ট করে ডিকশনারি নিয়ে কঠিন শব্দের অর্থ বের করে পড়তাম।" )) ঐ ছোট দুই ভাই বোনকে খুব কষ্ট করে ডিকশনারি ঘেঁটে মেঘনাদবধ কাব্যের কঠিন দাঁত ভাঙ্গা ( তৎসম) শব্দ সমূহের অর্থ বের করতে হত । তাহলে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অবস্থা কেমন ছিল যারা ছিল স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত ?! সুতরাং তারা তো মেঘনাদবধের মতো এ সব কাব্য ও সাহিত্য ঠিক মতো বুঝতেই পারতেন না । আর এ সমস্যা কমবেশি আজও বিদ্যমান আছে !!

ভাষার তথাকথিত ভাবগাম্ভীর্যতাপূর্ণ এ কৃত্রিমতা ও দুর্বোধ্যতার উদ্ভব ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ভাবে বাংলা ভাষার সংস্কৃতীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে:

" বাংলা গদ্যের সূচনাতেই এর রূপের পরিবর্তন ঘটেছিল। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে কেন্দ্র করে যে লেখক গোষ্ঠী গদ্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন তারাই বাংলা গদ্যকে সংস্কৃতঘেঁষা করে তোলেন । এতদিন পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবনের কথাবার্তায় তদ্ভব , আরবি-ফার্সি ও দেশজ শব্দমিশ্রিত যে ভাষা প্রচলিত ছিল তা সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতগণের প্রভাবে সংস্কৃত শব্দসম্ভারে সমৃদ্ধ (?) হয়ে ওঠে এবং গদ্যরীতির মধ্যে কৃত্রিম গাম্ভীর্য আনীত হয় । এমনি ভাবে বাংলা গদ্য একটা রূপ পরিগ্রহ করে । তবে বাংলাকে সংস্কৃতীকরণের ব্যাপারে বিদেশী পাদ্রিদের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সজনীকান্ত দাস এ প্রসঙ্গে বলেছেন: '১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হ্যালহেড এবং পরবর্তীকালে হেনরি পিটস ফরস্টার ও উইলিয়াম কেরি বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত জননীর সন্তান ধরিয়া আরবি ফারসি অনধিকার প্রবেশের বিরুদ্ধে রীতিমত ওকালতি করিয়াছেন এবং প্রকৃতপক্ষে এই তিন ইংলন্ডীয় পণ্ডিতের যত্ন ও চেষ্টায় অতি অল্প দিনের মধ্যে বাংলা ভাষা সংস্কৃত

হইয়া উঠিয়াছে। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এই আরবি - ফারসি - নিসূদন যজ্ঞের সূত্রপাত এবং ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে আইনের সাহায্যে কোম্পানির সদর মফস্বল আদালত সমূহে আরবি - ফারসির পরিবর্তে বাংলা ও ইংরেজি প্রবর্তনে এই যজ্ঞের পূর্ণাহুতি । '

সে আমলে আরবি - ফারসিকে অশুদ্ধ ধরে শুদ্ধ পদ প্রচারের জন্য কতিপয় ব্যাকরণ - অভিধানও রচিত হয়েছিল। সাহেবরা ( ইংরেজরা) সুবিধা পেলেই আরবি - ফার্সি ভাষার বিরোধিতা করে বাংলা ও সংস্কৃতকে প্রাধান্য দিতেন । ফলে দশ পনের বছরের মধ্যেই বাংলা গদ্যের আকৃতি ও প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যায় ।

অষ্টাদশ শতকের অষ্টম ও নবম দশকে হ্যালহেড ও চার্লস উইলকিন্স সংস্কৃত ও বাংলা শব্দ সংগ্রহে মনোনিবেশ করে সংস্কৃত রীতিতে বাংলা শব্দকোষ সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন । হ্যালহেড তাঁর ব্যাকরণের ভূমিকায় নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তাঁর ধারণা,

' বাংলা গদ্যের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত বাংলা লিখিত ভাষা প্রয়োজনমত সংস্কৃত শব্দ ভাণ্ডার আহরণ করত বলেই ভাষার রীতি ও প্রকৃতি অকৃত্রিম ও সরল ছিল । কিন্তু মুসলমান শাসনকর্তাদের অত্যাচারে সকল ব্যাপারে ফারসি ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়াতে চলতি ভাষার শুদ্ধতা নষ্ট হয়েছে এবং কেবলমাত্র অভ্যাসের দোষে বহু ফারসি শব্দ বাংলা ভাষার অঙ্গ হয়ে পড়েছে। যে বহুসংখ্যক রাজনৈতিক আন্দোলন দ্বারা বাংলাদেশ পীড়িত হয়েছে সেগুলো দেশের ভাষার সারল্যও নষ্ট করেছে এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী , ভিন্নদেশবাসী ও পৃথক রীতিনীতি সম্পন্ন লোকদের সঙ্গে দীর্ঘকাল ব্যাপী লেনদেন ফলে বাঙ্গালির কানে বৈদেশিক শব্দ আর অপরিচিত ঠেকে না। মুসলমান, পর্তুগিজ ও ইংরেজ পর পর ধর্ম আইন কারুশিল্প ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত বহু শব্দভাণ্ডার বাংলা ভাষার কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে।' এই ধরণের মনোভাব হেনরি পিটস ফরস্টার ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তার সুবিখ্যাত ইংরেজি - বাংলা অভিধান সংকলন কালেও ব্যক্ত করেছেন। উইলিয়াম কেরিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা গদ্যের ইতিহাসে বাঙালির দান নেই বললেই চলে , সাহেবদের দ্বারাই তার পরিচর্যা হয়। বর্তমানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বলে যা খ্যাত , অষ্টাদশ শতাব্দীর নীহারিকা অবস্থা থেকে সাহেবদের সম্মিলিত চেষ্টাতেই তা প্রথম রূপ গ্রহণ করেছিল । আধুনিক যুগের পূর্বে বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি ফারসি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। কিন্তু গদ্যরীতির উদ্ভবের যুগে মুসলমানদেরও কোন অবদান ছিল না। বরং সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের প্রভাব ছিল ব্যাপক । এ ভাবেই বাংলা সংস্কৃতঘেঁষা হয়ে ওঠে । ( দ্র: বাংলার সাহিত্যের ইতিহাস, গদ্যের উৎপত্তি ও বিকাশ পৃ : ৩৮৯ - ৩৯০ )।

প্রথম পর্ব সমাপ্ত

চলবে

تبصرہ ارسال

You are replying to: .