হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ঘোষণা এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ পাল্টা হুশিয়ারি দেয়ার পর থেকে দু'দেশের সীমানায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় দু'পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের। এই যুদ্ধ আশংকার মধ্যেই ইসরায়েলের অন্যতম শীর্ষ পত্রিকা হারেৎজ লেবাননের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সর্বাত্মক যুদ্ধের ব্যাপারে তেল আবিবের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে লিখেছে: হিজবুল্লাহর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ হলে ইসরায়েল নিশ্চিতভাবে পরাজিত হবে।
দখলদার ইসরায়েল ভিত্তিক গণমাধ্যম দৈনিক হারেৎজ ‘লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধের ফলাফল সম্পূর্ণ পরাজয়’ শিরোনামের এক সংবাদ বিশ্লেষণে লিখেছে: লেবাননের বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ শুরু করলে বিশেষ করে দেশটির বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালালে ইসরায়েল ভয়াবহ পরাজয়ের সম্মুখীন হবে।
লেবাননে ব্যাপকভিত্তিক হামলা চালিয়ে মূলত দক্ষিণ লেবানন দখল করার খায়েশ ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের। এর মাধ্যমে তেল আবিব দক্ষিণ লেবানন থেকে হিজবুল্লাহকে উৎখাত করার বাসনাও পোষণ করে। কিন্তু দৈনিক হারেৎজ লিখেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর এই কাজ করার সামর্থ্য নেই।
পত্রিকাটির সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে: ইসরায়েলের পক্ষে লিতানি নদী পর্যন্ত দক্ষিণ লেবানন দখল করা সম্ভব নয়। ইসরায়েলি সেনারা বড়জোর যেটি করতে পারে সেটি হচ্ছে, সীমান্তে সীমিত আকারে এতটুকু অভিযান পরিচালনা করা যাতে উত্তর ইসরায়েল থেকে যারা দক্ষিণ দিকে কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে বা পালিয়ে যাওয়ার জন্য চিন্তা করছে তারা তাদের ঘরবাড়িতে ফিরতে নিরাপদ বোধ করে।
উল্লেখ্য যে, আল-আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর লেবাননের হিজবুল্লাহ তার ভাণ্ডারে থাকা নিখুঁত সমরাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের একেবারে অভ্যন্তরে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হামলা শুরু করে। এই হামলার ফলে উত্তর ইসরায়েলের বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা তাদের ঘরবাড়ি ফেলে দক্ষিণ দিকে কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম পালিয়ে যাওয়া ইহুদিবাদীর সংখ্যা ৬০ হাজার বলে উল্লেখ করলেও প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। কার্যত লেবানন সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলি বাহিনী অসহায় হয়ে পড়ে এবং বিষয়টি ইহুদিবাদী কর্মকর্তা ও যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের মারাত্মকভাবে ভাবিয়ে তোলে।
এই উদ্বেগময় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে লেবানন সীমান্তবর্তী পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত জটিল’ আখ্যায়িত করে ইহুদিবাদী পত্রিকাটি দৈনিক হারেৎজ লিখেছে: এমনকি উত্তরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদে ফিরিয়ে দিতে কোনো সীমিত পর্যায়ের অভিযানের ফলেও উত্তেজনা ভয়ানকভাবে বেড়ে যেতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ইহুদিবাদী শীর্ষস্থানীয় এই দৈনিক আরো লিখেছে: ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের যে জবাব হিজবুল্লাহ দেবে তাতে যুদ্ধ আর অল্প পর্যায়ে সীমিত থাকবে না বরং ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের কৌশলগত অবকাঠামোতে হিজবুল্লাহর হামলা হবে এবং যুদ্ধের প্রথম ধাক্কায় ইসরায়েলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
শুধু দৈনিক হারেৎজ নয়, আরেক ইসরায়েলি দৈনিক ইয়াদিওত আহারোনোত সম্প্রতি লিখেছে: লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও অত্যন্ত বিপজ্জনক সামরিক প্রযুক্তি রয়েছে। লেবানন সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে নির্বিঘ্নে শত শত ড্রোনের ঢুকে পড়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব ড্রোন মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়।
দৈনিক ইয়াদিওত আহারোনোত তাদের প্রকাশিত প্রবন্ধে আরো লিখেছে, হিজবুল্লাহর এই হুমকি মোকাবিলা করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও সমরবিদরাও এখন একথা বলতে শুরু করেছেন যে, লেবাননের হিজবুল্লাহ একাই ইসরায়েলের গোটা সামরিক শক্তির অর্ধেককে উত্তর ইসরায়েলে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে; যে কারণে এই বাহিনী দক্ষিণের গাজা ফ্রন্টে সঠিকভাবে মনযোগ দিতে পারছে না।