۲۲ آذر ۱۴۰۳ |۱۰ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 12, 2024
‘কারবালার সফর মানুষকে আত্মিক ও আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ, শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল করে’
জনাব মিরাজ হোসাইন

হাওজা / পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর একটি হলো এই আরবাইন।

রিপোর্ট: রাসেল আহমেদ রিজভী

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) শাহাদত বার্ষিকীর চল্লিশতম দিন বা চল্লিশাকে আরবিতে বলা হয় আরবাইন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর একটি হলো এই আরবাইন, যাতে অংশ নেন লাখ লাখ শিয়া-সুন্নি মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষ।

এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কয়েকদিন হেঁটে ইরাকের কারবালায় পৌঁছেছেন মিরাজ হোসাইন নামের এক বাংলাদেশি, যিনি বর্তমানে থাকেন ইরানের কোম শহরে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ১৮০ কিলোমিটার দূরের শহর নাজাফ (যেখানে হযরত আলী ইবনে আবু তালিব আলাইহিস সালামের সমাধিস্থল) থেকে যাত্রা শুরু করে প্রায় ৮০ কিলোমিটার হেঁটে শনিবার কারবালায় পৌঁছান মিরাজ হোসাইন। এই কারবালাতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (আ.)।

আরবাইনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার মাগরিবের পর থেকে আর শেষ হবে আজ রবিবার সন্ধ্যায়।

দ্বিতীয়বারের মতো আরবাইনে যোগ দেওয়া ২৩ বছর বয়সী মিরাজ হোসাইন নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, এ অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সবখানে জনসমুদ্র। হুইল চেয়ারে, ক্রাচে মানুষ ছিল আমাদের সাথে... বয়স্ক, নারী ও শিশুরাও ছিল।

৬১ হিজরীর ১০ই মুহাররম কারবালার যুদ্ধে ইমাম হোসাইনের (আ.) শাহাদাতের স্মরণে আশুরার ৪০ দিন পর আরবাইন পালন করা হয়। ইমাম হোসাইনের (আ.) মৃত্যুর এই দিনটি শিয়া ইসলামের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।

২০২৩ সালে আরবাইনে ইরান, লেবানন, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি শিয়া মুসলমান একত্রিত হয়েছিলেন বলে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

তবে আরবাইনের এ যাত্রা বেশ কঠিন হতে পারে। পাকিস্তানের করাচি থেকে আরবাইনে যোগ দিতে আসা ৩৫ বছর বয়সী নারী সারাহ মুশতাক বলেন, হাঁটার এক পর্যায়ে তার আর পা নড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। একপর্যায়ে রাস্তার পাশে তাকে বসেও পড়তে হয়।

তবে তিনি এর সঙ্গে এ কথাও বলেন যে, শারীরিকভাবে এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু মানসিকভাবে নিজেকে আগে কখনও একটা উজ্জীবিত মনে হয়নি।

দিনের বেলায় ৪৭ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরমে আরবাইনের যাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। গরম, মানুষের ভিড়, ক্লান্তি, পানিশূন্যতায় প্রায়ই মানুষের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার খবর আসতে থাকে।

আরবাইনে যোগ দেওয়া মানুষদের জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি বহু বিদেশিও খাবার, পানি এবং বিছানার মতো দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার জন্য রাস্তার পাশে বিশ্রামের স্থান, অস্থায়ী স্টল এবং ক্লিনিক স্থাপন করেন। এ সময় মানব সেবার এক অনন্য নিদর্শনের পাশাপাশি ঐশী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মানুষ মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন।

মিরাজ হোসাইন বলেন, এই সেবার বিনিময়ে তারা কিছু চানও না। মানুষের সেবা করতে পারাই যেন তাদের পরম প্রাপ্তি। তারা ইমাম হোসাইনের (আ.) এই অনন্য সেবার প্রতিদান কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কাছ থেকে পাওয়ার আশা করেন।

বাংলাদেশি নাগরিকদের ইরাক ভ্রমণে নানা বাধা ও বিধিনিষেধ, ভিসা প্রাপ্তিতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও এসবের কোনো কিছুই থামাতে পারেনি মিরাজকে।

তিনি বলেন, কেবল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম হোসাইনের (আ.) ভালোবাসা ও মহব্বতের টান থেকেই এখানে আসা। প্রতিবছরই নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মনে হয় যে শেষ পর্যন্ত আমি যেতে পারব এবং ইমাম হোসাইনের (আ.) উছিলায় আল্লাহ সব সহজও করে দেন। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়।

তিনি আরও বলেন, এই সফর মানুষকে আত্মিক ও আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ ও শক্তিশালী করে। মানুষকে তার মানবিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত ও দায়িত্বশীল করে। এটা আমার দ্বিতীয় সফর। জীবনে যতবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাওফিক দিবেন, ততবার এই আধ্যাত্মিক সফরে অংশগ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .