হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্প্রতি ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদ ঘিরে ইসরায়েলি সরকারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রীর উস্কানিমূলক বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক দলগুলোসহ বেশ কয়েকটি দেশ। পবিত্র এ স্থানটির ঐতিহাসিক ও আইনি মর্যাদাকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম বিশ্ব।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতমার বেন গাভির ‘চরমপন্থি’ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা করেছেন যে, তারা আল-আকসা মসজিদ এলাকায় ইহুদিদের জন্য পৃথক একটি উপাসনালয় (সিনাগগ) নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।
ইসরায়েলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, আল-আকসা মসজিদ এলাকা ঘিরে বেন গাভিরের পরিকল্পনাকে সমর্থন করার জন্য ইসরায়েলের ঐতিহাসিক নিদর্শন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও পাঁচ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলের এ ঘোষণার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, ‘অপরাধী ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা আল-আকসা মসজিদ নিয়ে তার বিদ্বেষপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তারা এতদূর এগিয়েছে যে, নির্লজ্জভাবে আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা উপাসনালয় নির্মাণের কথা বলছে’।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইরান এ ধরনের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা বিনষ্ট করা এবং নতুন করে সেখানে যে কোনো আগ্রাসন চালানোর পরিণতির ব্যাপারে ইসরায়েল যেন সতর্ক থাকে’।
তিনি আরও লেখেন, বর্তমানে ইসরায়েলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের বিবেকবাক মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব এবং স্বাধীনতাপ্রেমীরা আজ আল-আকসা মসজিদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং অপরাধী ইসরাইলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ।
এ নিয়ে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান আল-সাফাদিও সামাজিক নেটওয়ার্ক এক্স-এ তার ব্যক্তিগত একাউন্টে এক বার্তায় লিখেছেন, আল-আকসা মসজিদের মতো পবিত্র স্থানগুলোতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাফাদি এ সময় জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলি শাসক বিদ্বেষমূলক মতাদর্শ অবলম্বন করে আল-আকসা মসজিদের প্রকৃতি ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।
এদিকে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আল-আকসা মসজিদে একটি উপাসনালয় নির্মাণের বিষয়ে ইসরায়েলি মন্ত্রী বেন গাভির বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, মুসলিম বিশ্ব বারবার মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করাকে সহ্য করবে না।
সৌদি আরব আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক ও আইনি মর্যাদাকে সম্মান করার ওপর জোর দিয়েছে।
এদিকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও আল আকসা মসজিদে ইহুদিদের উপাসনালয় নির্মাণে বেন গাভির ব্যক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ অঞ্চলকে ধর্মযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ইসরাইল এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, আমেরিকার রাজনৈতিক, সামরিক এবং আর্থিক সহায়তা ইসরাইলকে গণহত্যা এবং মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনাগুলো ধ্বংসে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
এ বিষয়ে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত আল-আকসা মসজিদে হামলার জন্য ইসরাইল সরকারের তহবিল বরাদ্দের সিদ্ধান্ত উত্তেজনাকে বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে যাবে। ইসরাইল আগুন নিয়ে খেলছে এবং এ অঞ্চলকে ধর্মযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ইসরাইলকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
বিবৃতিতে হামাস ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির ৫৭টি সদস্য দেশকে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরাইলের হাত থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করা এবং সেখানে একটি ইহুদি উপাসনালয় (সিনাগগ) নির্মাণের ধারণাটি ইহুদিবাদীদের বিশ্বাসের মধ্যে নিহিত এবং বছরের পর বছর ধরে চরমপন্থি ইহুদিরা এ বিশ্বাস লালন করে আসছে।
সূত্র: ইরনা ও মেহের নিউজ