হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ন্যায়বিচারের বসন্ত সমাগত। সামেরা থেকে বিশ্বের দিগ দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছে ১৫ ই শাবানের অপূর্ব খুশবু। মাহদীর আলোকিত অস্তিত্ব প্রাণে প্রাণে জাগিয়ে তুলছে আনন্দের মহাসমীরণ।
পবিত্র শবে বরাত বা ১৫ ই শাবান বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই কিংবা অন্তত প্রায় ১২০০ বছর ধরে একটি বিশেষ পবিত্র ও আনন্দঘন দিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অনেক বিশিষ্ট সুন্নী মনীষী মনে করেন, সবচেয়ে মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে ১৫ই শাবান অন্যতম। ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিনে নানা ধরনের মিষ্টি বিতরণ ও ব্যাপক ইবাদত বন্দেগী করা হয়। আলেমদের অনেকেই মনে করেন এই রাতের ইবাদত-বন্দেগী কবুল হয় এবং মুসলমানের সব গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার এক উপযুক্ত সুযোগ দেয়া হয় এই রাতে।
মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন ১৫ ই শাবান হল মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)'র পবিত্র জন্মদিন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের ১১ তম সদস্য ইমাম হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)'র পুত্র হিসেবে তাঁর জন্ম হয়েছিল ২২৫ হিজরিতে ইরাকের ( বর্তমান রাজধানী বাগদাদের উত্তরে) পবিত্র সামেরা শহরে। তাঁর মায়ের নাম ছিল নার্গিস। এবং তিনি আল্লাহর আদেশে এক পর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যান। তাঁর অদৃশ্য থাকার সময়ও দুই ভাগে বিভক্ত। স্বল্পকালীন সময়ের জন্য অদৃশ্য হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে অদৃশ্য থাকা। দীর্ঘ মেয়াদে অদৃশ্য থাকার পর উপযুক্ত সময়ে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন এবং সব ধরনের জুলুম ও বৈষম্যের অবসান ঘাটিয়ে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার ও ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা কাসাসের পঞ্চম আয়াতে বলেছেন:
"এবং আমি ইচ্ছা করলাম যে, যাদের পৃথিবীতে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল , তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদের নেতৃত্ব দান করতে এবং তাদেরকে পৃথিবীর (শাসন-ক্ষমতার) উত্তরাধীকারী করতে।"
এই আয়াতের তাতপর্য অনুযায়ী এমন এক যুগ আসবে যখন বিশ্বব্যাপী ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আর ওই ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিদেরই নেতা হবেন হযরত ইমাম মাহদী (আ.)। তিনি পুনপ্রতিষ্ঠিত করবেন মানুষের প্রকৃত মর্যাদা।
মানব জাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহাদী (আ.)এমন সময় বিশ্বে পুনরায় আবির্ভূত হবেন যখন বিশ্বব্যাপী অবিচার ও জুলুমের মাত্রা বাড়তে থাকায় একদিকে ঈমানদারদের ঈমান ও প্রতিরোধ বাড়তে থাকবে এবং দূর্বল চিত্তের অধিকারী জনগণ ক্রমেই মুক্তির ব্যাপারে বেশি আশাহীন হতে থাকবেন ।
শিয়া ও সুন্নী সূত্রগুলোতে প্রসিদ্ধ এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মাহদী (আ.)'র যুগে মানবজাতি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কল্যাণ অর্জন করবে। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর দানশীলতা ও মানব জাতির প্রতি তাঁর মমত্ববোধ এবং ভালোবাসাও এ রেওয়ায়েত থেকে স্পষ্ট। ওই বর্ণনায় ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“যখন আহলে বাইতের আল কায়েম আবির্ভূত হবে এবং আন্দোলন করবেন তখন তিনি যাবতীয় সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে জনগণের মাঝে বণ্টন করবেন এবং সর্বত্র ন্যায়পরায়ণতা ও ন্যায়বিচার কায়েম করবেন। যে কেউ তাঁর আনুগত্য করবে সে আসলে মহান আল্লাহরই আনুগত্য করবে এবং যে কেউ তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে সে আসলে মহান আল্লাহরই বিরুদ্ধাচরণ করবে। তিনি (তুরস্কের?) আনতাকিয়ার একটি গুহা থেকে তাওরাত ও অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ বের করে আনবেন এবং তাওরাতের বিধানের ভিত্তিতে ইহুদীদের মধ্যে, ইঞ্জিলের বিধান অনুযায়ী খ্রিস্টানদের মধ্যে ও যূবুরের বিধানের ভিত্তিতে এ গ্রন্থের অনুসারীদের মধ্যে এবং পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহের ভিত্তিতে মুসলমানদের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবীর ভেতর ও বাইরের যাবতীয় সম্পদ তাঁর কাছে সঞ্চিত হবে। আর তিনি জনগণকে বলবেন : "তোমরা সবাই যে জিনিসের জন্য আত্মীয়তা ও রক্ত-সম্পর্ক ছিন্ন করেছ, পরস্পরের রক্ত ঝরানো হালাল বলে গণ্য করেছ এবং নানা হারাম কাজ করেছ সেই জিনিসের দিকে চলে এসো...।"
তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে এতটা দেবেন যে, এর পূর্বে সে কারো কাছ থেকে তা পায় নি। তিনি পৃথিবীকে ঠিক সেই মাত্রায় ন্যায়বিচার দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেবেন ঠিক যেভাবে তা অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য ও অকল্যাণে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩৫১)
মহানবী (সা.) বলেছেন :
“মাহ্দীর যুগে আমার উম্মত এমন নেয়ামত লাভ করবে যে, তারা পূর্বে কখনই তা লাভ করে নি। আকাশ থেকে তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং তখন পৃথিবীর বুকে সব ধরনের উদ্ভিদই জন্মাবে।” (ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি, পৃ. ৯৮
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আরো বলেছেন যে, তাঁর উম্মত তাঁর (মাহ্দী) কাছে এমনভাবে আশ্রয় নেবে যেমনভাবে মক্ষীরাণীর কাছে মৌমাছিরা আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি পৃথিবীকে ঠিক সেভাবে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন যেভাবে তা অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্য দিয়ে পূর্ণ হবে। আর সমগ্র মানব জাতি ঠিক তাদের আদি সমাজের মতো হয়ে যাবে। তিনি কোন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করবেন না এবং কোন রক্ত ঝরাবেন না (অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবেন না)।” (ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি, পৃ. ৯৯)
মনে হচ্ছে ‘ঠিক তাদের আদি সমাজের মতো’- এ বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে আদি মানব সমাজ যা এক অখণ্ড জাতি ছিল। মানব জাতি স্বভাবজাত প্রকৃতি ও নির্মলতার ভিত্তিতে জীবন যাপন করত এবং তাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য ছিল না। আর এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে : “মানব জাতি এক অখণ্ড জাতি ছিল।” (সূরা বাকারাহ্ : ২১৩)
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগে মানব সমাজ প্রথমে দারিদ্র্যমুক্ত ও অভাবমুক্ত একটি সমাজে পরিণত হবে। মহানবী (সা.) আরো বলেছেন :
“আসমান ও যমীনের বাশিন্দারা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করার ব্যাপার কার্পণ্য করবে না এবং যমীনেও উদ্ভিদ, বৃক্ষ ও তরুলতা জন্মানোর পথে কোন বাধা থাকবে না অর্থাৎ পৃথিবী বৃক্ষ, তরুলতা, ফুলে-ফলে ভরে যাবে। এর ফলে জীবিতরা আকাক্সক্ষা করতে থাকবে : হায় যদি এ সব নেয়ামত ভোগ করার জন্য মৃতরা জীবিত হতো।” (ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি, পৃ. ৯৯)
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন :
“মহান আল্লাহ্ মাহদীর মাধ্যমে নিজ ধর্মকে বিজয়ী করবেন যদিও কাফের-মুশরিকরা তা পছন্দ করবে না এবং পৃথিবীর সমস্ত বিধ্বস্ত ও বিরাণ এলাকা তাঁর মাধ্যমে আবাদ হয়ে যাবে।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ১৯১)
সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“যে বছর আল কায়েম আল মাহ্দী আবির্ভূত হবেন এবং কিয়াম করবেন সে বছর চব্বিশ বার পৃথিবীর ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হবে যার বরকত ও কল্যাণকর প্রভাব সর্বত্র দৃষ্টিগোচর হবে।” (কাশফুল গাম্মাহ্, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৫০)
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : “জ্ঞান সাতাশটি অক্ষর (শাখা-প্রশাখা) সমতুল্য। সকল নবী-রাসূল সম্মিলিতভাবে যা এনেছেন তা আসলে জ্ঞানের দু’টি অক্ষরস্বরূপ। মানব জাতি মাহ্দীর আবির্ভাবের দিবস পর্যন্ত এ দু’টি অক্ষরের বেশি কিছু জানতে পারবে না। আর যখন আল কায়েম আল মাহদী আবির্ভূত হবে ও কিয়াম করবে তখন সে জ্ঞানের অবশিষ্ট পঁচিশটি অক্ষর বের করে তা মানব জাতির মধ্যে প্রচার করবে; আর এভাবে সে জ্ঞানের সাতাশ ভাগই প্রচার করবে ও জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেবে।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৬)
এ রেওয়ায়েতে যদিও মহান নবী-রাসূলদের আনীত জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে দৃকপাত করা হয়েছে তবুও মহান আল্লাহ্র পরিচিতি (স্রষ্টাতত্ত্ব), রিসালাত ও আখিরাত সংক্রান্ত জ্ঞান ছাড়াও এ রেওয়ায়েতে প্রাকৃতি বিজ্ঞানসমূহের দিকেও দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। আর বর্ণিত হাদীসসমূহ অনুযায়ী মহান নবিগণ মানব জাতিকে এ সব জ্ঞানের কতিপয় মূলনীতিও শিখিয়েছেন এবং তাদেরকে এ দিকে ধাবিত করে তাদের সামনে এসব জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুটিকতক প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করেছেন।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন :
“আল কায়েমের যুগে প্রাচ্যে বসবাসরত মুমিন ব্যক্তি পাশ্চাত্যে অবস্থানকারী নিজ ভাইকে দেখতে পাবে এবং যে ব্যক্তি পাশ্চাত্যে আছে সেও প্রাচ্যে বসবাসরত তার ভাইকে দেখতে পাবে।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩৯১)
ইমাম সাদিক (আ.) আরো বলেছেন :
“যখন আল কায়েম আবির্ভূত হয়ে বিপ্লব করবে তখন মহান আল্লাহ্ আমাদের অনুসারীদের চোখ ও কান এতটা শক্তিশালী করে দেবেন যে, তাদের ও ইমামের মাঝে কোন মধ্যবর্তী মাধ্যম ও দূত বিদ্যমান থাকবে না। এটা এমনভাবে হবে যে, ইমাম যখনই তাদের সাথে কথা বলবে, তারা তা শুনতে পাবে এবং তাঁকে দেখতেও পাবে। অথচ ইমাম তাঁর নিজ জায়গাতেই থাকবে।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ২৩৬)
ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“সাহিবুল আমরের (ইমাম মাহ্দী) হাতে যখন যাবতীয় বিষয় ও কাজ অর্পণ করা হবে তখন ভূ-পৃষ্ঠের নীচু স্থানগুলোকে উঁচু এবং উঁচু স্থানগুলোকে সমতল করে দেয়া হবে। আর তা এমনই হবে যে, তার কাছে পৃথিবী হাতের তালুর মতো হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি আছে যে তার হাতের তালুতে একটি চুল থাকলে তা দেখতে পায় না?”
বর্ণিত হয়েছে যে, আলোর একটি স্তম্ভ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আকাশ পর্যন্ত তাঁর জন্য স্থাপন করা হবে এবং তিনি তার মধ্যে বান্দাদের যাবতীয় কাজ প্রত্যক্ষ করবেন। ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“আমি যেন আল কায়েমের সঙ্গী-সাথীদেরকে দেখতে পাচ্ছি যারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং তাদের আজ্ঞাবহ, এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের হিংস্র পশুকুল এবং আকাশের শিকারী পাখীরাও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করবে। সবকিছুই, এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের এক অঞ্চল আরেক অঞ্চলের ওপর গর্ব করে বলবে : আজ আল কায়েমের একজন সঙ্গী আমার ওপর পদধুলি দিয়েছেন এবং আমাকে অতিক্রম করেছেন।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩২৭)
ইমাম বাকির (আ.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে :
“যখন আমাদের কায়েম আবির্ভূত হবে ও বিপ্লব করবে তখন পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলে যে ব্যক্তিকেই প্রতিনিধি হিসাবে প্রেরণ করবে তখন তাকে বলবে : তোমার হাতের তালুতেই তোমার কর্মসূচী ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা আছে। যখনই তোমার ক্ষেত্রে কোন ব্যাপার ঘটবে যা তুমি বুঝ নি এবং যার হিকমতও তোমার জানা নেই তখন তুমি তোমার হাতের তালুর দিকে তাকাবে এবং সেখানে যে নির্দেশনা বিদ্যমান আছে তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” (নুমানী প্রণীত গাইবাত, পৃ. ৩১৯)
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ থেকে খুব ভালোভাবে বোঝা যায় যে, তিনি যে বিশ্ব ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করবেন তা হযরত সুলাইমান (আ.) ও বাদশাহ যূলকারনাইনের রাজত্ব অপেক্ষাও বিশাল। আর কতিপয় রেওয়ায়েত থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন ইমাম বাকির (আ.)-বলেছেন :
“আমাদের (ইমাম মাহ্দীর) রাজত্ব হযরত সুলায়মান ইবনে দাউদ (আ.)-এর রাজত্বের চেয়ে ব্যাপক এবং আমাদের রাজ্যের পরিসীমা তাঁর রাজ্যের পরিসীমা অপেক্ষা বড় হবে।”
রেওয়ায়েতসমূহের ভিত্তিতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমত সমগ্র বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। যার ফলে এমন কোন জনপদ থাকবে না যেখানে মহান আল্লাহ্র একত্ব এবং মহানবী (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়া হবে না। আর পৃথিবীর বুকে এমন কোন বিধ্বস্ত অঞ্চলও বিদ্যমান থাকবে না যার পুনর্গঠন ও আবাদ করা হবে না।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন সরকার পৃথিবীর ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। আর তাঁর পর তাঁর সন্তান-সন্ততিগণ যাঁরা তাঁরই আদর্শ ও পথ নিরবচ্ছিন্নভাবে সংরক্ষণ ও অনুসরণ করবেন তাঁরাই শাসনকর্তৃত্ব পাবেন। আর তখন কতিপয় নবী এবং আহলে বাইতের কয়েকজন ইমাম পুনঃপ্রত্যাবর্তন করবেন এবং তাঁরা এ বিশ্বের পরিসমাপ্তিকাল পর্যন্ত রাজত্ব করবেন ও ইসলামী শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখবেন।
ইবনে আরাবী, শারানী এবং অন্যান্য ব্যক্তির মত কতিপয় সুন্নী আলেমও বিশ্বাস করেন যে ইমাম মুহম্মদ ইবনে হাসান আল-আসকারীই হযরত মাহদী (আ.) হবেন। তারা তাঁর নাম ও নসব (বংশ পরিচিতি) স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন এবং তাঁকে তারা জীবিত ও গায়েব বলে বিশ্বাস করেন। প্রতিশ্রুত মাহদী গ্রন্থের রচয়িতা এসব সুন্নী আলেমের মধ্য থেকে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ হযরত ইমাম মাহদী (আ.)'র আবির্ভাব ত্বরান্বিত করুন।